পদ্মা সেতু চালুর পর ওই পথে চলাচলরত ফেরি ও লঞ্চের কী হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ির মধ্যে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটেও ফেরির সংখ্যা কমানো হবে।
তখন এ দুই রুট থেকে ফেরি অন্যান্য রুটে সরিয়ে নেওয়া হবে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটের ফেরিগুলো চলাচল করবে।
ঈদের পরে ধীরে ধীরে এসব ফেরি অন্য রুটে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে এখন আটটি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। এ দুই রুটে মোট ফেরি আছে ২৯টি। প্রতিবছর এই দুই রুটে চলাচলকারী ফেরি থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আয় হয় বিআইডব্লিউটিসির। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরি থেকে আয় কমে যাবে। তাই আয় ঠিক রাখতে নতুন নতুন রুট চালু করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নতুন কয়েকটি রুট নিয়ে কাজ করেছি। পদ্মা নদী পারাপারে যেসব ফেরি চলাচল করছে, সেগুলো নতুন রুটে স্থানান্তর করব। তবে ঈদুল আজহা পর্যন্ত ফেরিগুলো থাকবে। কোনো কারণে যানজট দেখা দিলে ফেরি কাজে লাগানো হবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ভবিষ্যতে চালুর জন্য ১৯টি নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে চালু রুটেও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার নরাদহ, পিরোজপুরের বেকুটিয়া থেকে চরখালী, কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে হিজলা এবং আমতলী থেকে বরগুনা। তালিকায় আছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে জামালপুর পর্যন্ত ফেরি রুটও।
চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত ফেরি রুট চালুর চাপ আছে। নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে ভোলার মনপুরা হয়ে তজুমদ্দীন পর্যন্ত ফেরি দেওয়া নিয়েও আলোচনা চলছে।বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, নতুন ফেরি রুট চালুর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে যমুনা নদীর কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে চিলমারী নৌরুট। এ রুটে ফেরি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে।
এ ছাড়া আরিচা-খয়েরচর রুটে ফেরি চালু হলে পাবনা ও ঈশ্বরদী থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার কমবে। বিআইডব্লিউটিসির আওতায় এখন ছয়টি রুটে ফেরি চলে। এগুলো হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজিরহাট, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া। এর মধ্যে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে গাড়ি পরিবহন সবচেয়ে বেশি।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে সাত থেকে আট হাজার যানবাহন পারাপার হয়। যানবাহন পারাপার করে প্রতিবছর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি সার্ভিস দিয়ে ১০০ কোটি টাকা আয় হয়। একইভাবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিসে আয় হয় ২৫০ কোটি টাকা। এই দুটি রুটই বিআইডব্লিউটিসির আয়ের বড় উৎস।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিআইডব্লিউটিসির বহরে মোট ৫৩টি ফেরি আছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ফেরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে ১২টি ফেরি বিআইডব্লিউটিসির বহরে যোগ হচ্ছে। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ফেরিগুলো নতুন রুটে চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার আগে থেকে চালু ছিল আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ১৯৮৭ সাল থেকে মাওয়া-মাঝিঘাট ও চরজানাজাত রুটে ফেরি চালু হয়। পরে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হলে মাওয়া থেকে শিমুলিয়ায় ঘাট হস্তান্তর করা হয়। এরপর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও মঙ্গলমাঝির ঘাটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল করে। প্রতিদিন এই দুটি নৌরুটে রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাটসহ ২১ জেলার মানুষ চলাচল করে।
২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর ওই এলাকায় চলাচলকারী লঞ্চের ব্যবহার কমে যাবে। বর্তমানে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে ৭০ থেকে ৭৫টি লঞ্চ চলাচল করছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এসব লঞ্চ কোথায় ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মালিকেরা। অবশ্য লঞ্চগুলো অন্য রুটে নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চগুলো অন্য রুটে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া না গেলে স্বাভাবিকভাবেই লঞ্চগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।