বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সোনাতলা উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৭২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। আর ৩ হাজার লোককে করা হয়েছে অজ্ঞাত আসামি। শুক্রবার সোনাতলা থানায় এই মামলা করেন উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান ওরফে গেদা।
আসামিদের মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম আর ইসলাম স্বাধীন, জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারের নাম রয়েছে। এই মামলায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সোনাতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদ হোসেন মণ্ডল। তিনি বলেন, আতাউর রহমানের বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে তিনি এই মামলার বাদী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সোনাতলা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতাল ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম। মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাংসদ আবদুল মান্নান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম গাড়িবহর নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর বন্দর অতিক্রম করার সময় সৈয়দ আহম্মদ কলেজ স্টেশনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এখানে দুটি মোটরসাইকেল ও একটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর কাজী রফিকুল ইসলামের গাড়িবহর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোনাতলা উপজেলার চরপাড়া এলাকায় পৌঁছালে আবারও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কাজী রফিকুলের গাড়িবহর থামানোর চেষ্টা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী তিন ব্যক্তি জানান, বিএনপির গাড়িবহর চরপাড়া এলাকায় পৌঁছার আগে সেখানে নৌকার সমর্থনে মহিলা আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী সভা চলছিল। ধানের শীষের প্রার্থীর গাড়িবহরটি পাকুল্লা এলাকার দিকে যেতে চাইলে বাধার মুখে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে ধানের শীষের প্রার্থীর গাড়িবহর আসার খবর পেয়ে দিকদাইর ইউনিয়নের মহিচরণ বাজার এলাকায় নৌকার সমর্থকেরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পুলিশ জানায়, কাজী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী বহরে থাকা দুটি গাড়ি থেকে লোহার রড, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, পেট্রলবোমার সরঞ্জাম, কয়েক বস্তা ইটপাটকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সোনাতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদ হোসেন মণ্ডল বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিএনপির প্রার্থী সোনাতলায় গাড়ি-মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করেন। নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে বিএনপি প্রার্থীর গাড়ি ও বহরে থাকা অন্য একটি গাড়ি তল্লাশি করে নাশকতার সরঞ্জাম পাওয়া যায়। পরে গাড়ি দুটি আটক করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।