>
- ২৫৬৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন
- ৪০২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে
- প্রথম দিনে ইসিতে ৮৪ জনের আপিল
- কাল বুধবার পর্যন্ত আপিল করা যাবে
- উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাছাইয়ে দলগত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি বাদ পড়েছেন। বিএনপির ১৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তিনজনের।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের ভিড় এখন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হচ্ছেন। গতকাল সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে মোট ৮৪ জন ইসিতে আপিল করেছেন।
ইসি সূত্র জানায়, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ২ হাজার ৫৬৭ জন দলীয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৪০২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, যার ১৪১ জনই বিএনপির। ২৯৫টি আসনে বিএনপির ৬৯৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে ৫৫৫ জনের।
অন্যদিকে ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগের ২৮১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বৈধ হয়েছে ২৭৮ জনের। ২১০টি আসনে জাতীয় পার্টির ২৩৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে বৈধ হয়েছে ১৯৫ জনের মনোনয়ন আর ৩৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গণতন্ত্রী পার্টি ও কল্যাণ পার্টির কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি।
সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এবার ৪৯৮ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩৮৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, বৈধ হয়েছে ১১৪ জনের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থিতার সমর্থনে আসনের ১ শতাংশ ভোটারের সই না থাকা এবং সই না মেলায় বেশির ভাগ মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত অনেক ‘বিদ্রোহী’ও ছিলেন।
দলগত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি বাদ পড়ার পর গত রোববার ও গতকাল সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে আলোচনা হয় যে বিএনপিকে নির্বাচনবিমুখ করতে সরকার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ‘ঠুনকো’ অভিযোগেও ‘গণহারে’ মনোনয়নপত্র বাতিল করিয়েছে। রোববার রাতে নেতাদের আপিল করার এবং কোনো অবস্থাতেই মাঠ না ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নির্বাচনে কীভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, সেই ধারণা আমাদের ছিল। সেভাবেই কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাছাইয়ে সারা দেশে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ৩ হাজার ৬৫ টি। বৈধ হয়েছে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়ন ফিরে পেতে গতকাল থেকে আপিল করার সুযোগ পাচ্ছেন বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীরা। আজ মঙ্গল ও কাল বুধবারও রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করার সুযোগ থাকবে। এরপর ৬,৭ ও ৮ ডিসেম্বর শুনানি করে আপিলগুলো নিষ্পত্তি করবে ইসি। ইসির সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর গতকাল প্রত্যায়িত কপি সংগ্রহ করার জন্য সারা দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে ভিড় ছিল বাদ পড়া প্রার্থীদের। অনেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করে গতকালই ইসিতে আপিল করেছেন। গতকাল আপিল করা প্রার্থীদের মধ্যে ২২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে সাতজনের আবেদন বাতিল হয়েছে, কারণ তাঁরা লাভজনক পদে আছেন।
ইসিতে আপিল আবেদন জমা দিয়ে সাবেক মন্ত্রী চট্টগ্রাম–৫ থেকে বিএনপির প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া, পটুয়াখালী–৩ থেকে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি, খাগড়াছড়ি থেকে বিএনপির প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, বগুড়া–৭ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী মোরশেদ মিল্টন, বগুড়ার হিরো আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১–এর নবাব মোহাম্মদ শামছুল হুদা, ঝিনাইদহ-১–এর আবদুল ওয়াহাব, ঢাকা-২০–এর তমিজউদ্দিন, সাতক্ষীরা-২–এর মোহাম্মদ আফসার আলী, কিশোরগঞ্জ-২–এর মো. আখতারুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২–এর মো. তৈয়ব আলী, মাদারীপুর-৩–এর মো. আবদুল খালেক, সিলেট-৩–এর কাইয়ুম চৌধুরী, ঠাকুগাঁও-৩–এর এস এম খলিলুর রহমান, জয়পুরহাট-১ থেকে মো. ফজলুর রহমান, দিনাজপুর-২ থেকে মোকারম হোসেন, ঝিনাইদাহ-২–এর লেফটেন্যান্ট আবদুল মজিদ, ঢাকা-১–এর খন্দকার আবু আশফাক, দিনাজপুর-৩–এর সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর-৪–এর ফরিদুল কবীর তালুকদার, পটুয়াখালী-৩–এর মো. শাহাজাহান, পটুয়াখালী-১–এর মো. সুমন সন্যামাত, দিনাজপুর-১–এর পারভেজ হোসেন, মাদারীপুর-১–এর জহিরুল ইসলাম প্রমুখ গতকাল ইসিতে আপিল করেন।
গোলাম মাওলা রনি সাংবাদিকদের বলেন, ভুলে তিনি হলফনামায় সই করেননি। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সই করার সুযোগ দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আশা করেন, আপিলে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধতা পাবে।
বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী হিরো আলম বলেন, তিনি আশা করেন ন্যায়বিচার পাবেন। না হলে আদালতে যাবেন। ষড়যন্ত্র করে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আবার অনেকে গতকাল আপিল না করে এ বিষয়ে খোঁজখবর করতেও ইসিতে গিয়েছিলেন। তেমন একজন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে অজুহাতে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাতে তাঁর মনে হয় না কারও মনোনয়নপত্র টিকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। তবে সাধারণ নাগরিকদের যাঁরা দলের বাইরে থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতিতে ছিলেন, তাঁদের নিরুৎসাহিত করা হলো।
তফসিল অনুযায়ী, ভোট নেওয়া হবে ৩০ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যেই দলগুলোকে দল ও জোটের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ইসিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এ জন্য নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে ইসি। অনেক আসনে দলগুলোর একাধিক প্রার্থী আছে। যাঁর নামে দল চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র বা প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেবে তিনি বাদে অন্যদের মনোনয়নপত্র আপনা–আপনি প্রত্যাহৃত হয়ে যাবে।