নরসিংদী জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের কোনোটিতেই সুবিধা করতে পারছে না বিএনপি। দলটির এক প্রার্থী কারাগারে, আরেকজনের প্রার্থিতা স্থগিত। একজন এলাকাছাড়া, আরেকজন বলেছেন, তিনি অবরুদ্ধ। অন্যজন মাঠে থাকলেও আছেন পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে। আর দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ এখন পুলিশ। প্রচারণার শেষ দিনেও তাঁরা ভোটারদের কাছে যেতে পারেননি।
অন্যদিকে বেশ ফুরফুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাঁরা নিয়মিত গণসংযোগ, মিছিল-সমাবেশ করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরাই বিজয়ী হবেন বলে প্রচার করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত জেলার সংসদীয় আসনগুলো ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
নরসিংদী-১: আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বর্তমান সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির খোকন। তিনি একটি নাশকতার মামলায় গত ২৯ নভেম্বর থেকে কারাগারে। প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীরা এখানে ছন্নছাড়া, সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এলাকার কিছু জায়গায় পোস্টার ছাড়া দলটির কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম নেই।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই সরব আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিদিনই দলটি নানা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গতকাল বিকেলেও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জনসভা করেছে দলটি।
নরসিংদী-২: বর্তমান সাংসদ কামরুল আশরাফ খান। তিনি আওয়ামী লীগের এবারের প্রার্থী আনোয়ারুল আশরাফ খানের ভাই। বিএনপির প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তবে পুলিশের হয়রানি ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের হামলার কারণে তিনি এলাকায় আসতে পারছেন না বলে দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। এ পর্যন্ত পাঁচ দিন গণসংযোগে নেমে তিন দিন হামলার শিকার হয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর ৬টি মামলায় অন্তত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলটির নেতা-কর্মীরা এখনো গ্রেপ্তার ও হামলার আতঙ্কে। গতকালও দলটির কোনো কর্মসূচি ছিল না। অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত মিছিল, শোভাযাত্রা, মাইকিংসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ। গতকালও প্রচারণা চালিয়েছে তারা।
নরসিংদী ৩: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী জহিরুল হক ভূঁইয়া এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বর্তমান সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মনজুর এলাহীর প্রার্থিতা বুধবার স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। এর আগপর্যন্ত তিনি নির্বাচনী মাঠে সরব ছিলেন। তাঁর প্রচারণায় তিনবার হামলা হয়েছে। ধানের শীষ না থাকায় এখানে লড়াই হবে জহিরুল হক ও সিরাজুল ইসলামের মধ্যে। গতকালও তাঁরা দুজন জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়েছেন।
নরসিংদী-৪: এই আসনে নির্বাচনী আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। সর্বত্রই আওয়ামী লীগের একক প্রচারণা। দলটির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিএনপির প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ, পুলিশি গ্রেপ্তার ও সরকারি দলের হামলার কারণে তিনি ও তাঁর নেতা-কর্মীরা বের হতে পারছেন না। একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন তিনি। দলটির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিন দিন গণসংযোগে বের হয়ে দুই দিন হামলার শিকার হতে হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া ১৭টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নরসিংদী-৫: ১৯৯১ সালে এই আসনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি। এরপর প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হয়েছেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আশরাফ উদ্দিন বকুল। গতকাল পর্যন্ত আসনটিতে নির্বাচনী সহিংসতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মির্জারচর, চরমধুয়া, শ্রীনগর, চানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিলও করেছে বিএনপি।
রাজিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। কাউকে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হয়নি, হবেও না।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আসনটিতে দলটির মূল প্রতিপক্ষ পুলিশ। পুলিশের কারণে তাঁরা ঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। নেতাদের সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া। জানতে চাইলে আশরাফ উদ্দিন বলেন, তফসিলের পর তিনটি মামলা করা হয়েছে। ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাতেও ১৮ জনকে আটক করা হয়েছিল। চারজনকে চালান দেওয়া হয়েছে। গতকাল পুলের ঘাট, মির্জানগর বাজার ও চর আড়ালিয়ায় গণসংযোগের কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের হয়রানি ও হুমকির কারণে কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
তবে গতকাল শেষ নির্বাচনী কর্মসূচি হিসেবে স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।