>আজ সোমবার পর্যন্ত মোট ২০ প্রার্থীর নির্বাচন করার বিষয়টি আটকে গেছে। এদের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত। অন্য ১৮ জন ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী। এসব প্রার্থিতা আটকে যাওয়ায় ১৩টি আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ১০ প্রার্থীসহ মোট ১২ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। ১২ জনের মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ১১ জন আপিল বিভাগে আবেদন করে আজ সোমবার বিফল হয়েছেন; তাঁদের মধ্যে নয়জন বিএনপির প্রার্থী। নীলফামারী-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আমজাদ হোসেন সরকার হাইকোর্টের আদেশ প্রার্থিতা ফিরে পেলেও আজ তা স্থগিত হয়ে গেছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রার্থী ও পক্ষগুলোর করা পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বেশিরভাগ আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দেন। বেশ কয়েকটিতে স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
এ নিয়ে আদালতের আদেশে আজ সোমবার পর্যন্ত মোট ২০ প্রার্থীর নির্বাচন করার বিষয়টি আটকে গেছে। এদের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত। অন্য ১৮ জন ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী। এসব প্রার্থিতা আটকে যাওয়ায় ১৩টি আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই।
আজ সোমবার আদালতের আদেশে যাদের ভোটের পথ বন্ধ থাকল, তাদের মধ্যে বিএনপির ১০ প্রার্থী হলেন: জয়পুরহাট-১ আসনে মো. ফজলুর রহমান, রাজশাহী-৬ আসন মো. আবু সাঈদ চাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মো. মোসলেম উদ্দিন, ঝিনাইদহ-২ আসনে মো. আবদুল মজিদ, জামালপুর-৪ আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার, ঢাকা-১ আসনে খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনে তমিজ উদ্দিন, চাঁদপুর-৪ আসনে আবদুল হান্নান, বগুড়া-৭ আসনে মিল্টন মোর্শেদ ও নীলফামারি-৪ আসনে আমজাদ হোসেন সরকার।
১০ জনের মধ্যে আটজনের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী ও একটি আসনের ভোটার পৃথক রিট করেন। হাইকোর্ট আটজনের মনোয়নপত্র বৈধ ঘোষণার ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার বিচারপতির আদালতে পৃথক আবেদন করেন আট প্রার্থী, যার ওপর আজ শুনানি হয়। সৈয়দপুর পৌর মেয়র পদে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় আমজাদ হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে ইসি। এর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্ট রিট করে ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে ইসি, যার শুনানি নিয়ে আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন।
এর বাইরে চাঁদপুর-৪ আসনে আবদুল হান্নানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ নিয়ে রিট করে সোনালী ব্যাংক। হাইকোর্টের আদেশ আটকে যায় হান্নানের নির্বাচনে অংশ নেওয়া। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন হান্নান, যা আজ চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে।
ময়মনসিংহ-৮ আসনে মাহমুদ হাসান সুমন ও রংপুর-১ আসন মো. আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পৃথক উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে রিট করেন সংশ্লিষ্ট আসনের অপর দুই প্রার্থী। হাইকোর্টের আদেশ আটকে যায় তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া। প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তারা, যা চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে। হাইকোর্টে করা বেশিরভাগ রিট আবেদনকারীরপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা বেশিরভাগ আবেদনকারী প্রার্থীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদালতের আদেশে ইতিপূর্বে আটকে যাওয়া বিএনপির অপর আট প্রার্থী হলেন: বগুড়া-৩ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৭ আসনে সরকার বাদল, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বেগম আফরোজা খান, সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে তাহসিনা রুশদী লুনা, জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, দিনাজপুর-৩ আসনে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফা ও রংপুর-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানী।
বিএনপির পাঁচজনের প্রতীক ধানের শীষ থাকল ধানের শীষ প্রতীক পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন বিএনপির পাঁচ প্রার্থী। পৃথক পাঁচটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে হাইকোর্ট রুল দিয়ে রিট আবেদনকারী পাঁচ প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতীক ফিরে পেতে বিএনপির সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থী পৃথক আবেদন করেন, যা আজ অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে। শুনানি নিয়ে আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রইল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনজুরুল ইসলাম ওরফে বিমল।
কামরুন্নাহার শিরিনের আইনজীবী ফারজানা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়নের সময় প্রাথমিকভাবে কামরুন্নাহার শিরিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ওই মনোনয়ন বাতিল করে অপর প্রার্থী মনজুরুল ইসলামকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে প্রতীক বরাদ্দ দিতে বলা হয়। দ্বিতীয় দফা প্রতীক বরাদ্দের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়, কারণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুসারে একবারই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যায়। মনজুরুল ইসলামের আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। ফলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কামরুন্নাহার শিরিন নির্বাচন করবেন।
অপর চার প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীক থাকছে, তাঁরা হলেন: রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নাদিম মোস্তফার পরিবর্তে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির এস এ জিন্নাহ কবীরের পরিবর্তে খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু, নওগাঁ-১ আসনে বিএনপির ছালেক চৌধুরী পরিবর্তে মোস্তাফিজুর রহমান এবং বগুড়া-৩ আসনে আব্দুল মুহিত তালুকদারের পরিবর্তে মাসুদা মমিন।