আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির কোনো বিষয়ে সরকারের কোনো চাপ নেই। বিএনপির যে সাংসদ শপথ নিয়েছেন, তিনি স্থানীয় জনগণের চাপের কথা বলেছেন। বিএনপির রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়েও সরকারের কোনো চাপ বা চেষ্টা নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে সরকারের চাপ থাকার কারণ নেই। কেননা প্যারোলে মুক্ত হবেন কি না, সেটা নির্ভর করে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আবেদনের ওপর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো আবেদন আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুঝতে হবে বিএনপির জন্ম কোথায়। বিএনপি স্বর্ণলতার মতো। দেখতে সুন্দর কিন্তু শেকড় নেই।
নিজের দল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ পোড় খাওয়া দল। এই দলে সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী আছে বলে মনে করি না। তিনি বলেন, কিছু লোক আসবে যাবে, এটা রাজনীতিতে স্বাভাবিক।
আজ শুক্রবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। ব্রুনেই সফর শেষে সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ব্রুনেই সফরে বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা ও সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপিকে রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করাটা কী, আমি বুঝি না। বিএনপির কোনো ব্যাপারেই সরকার চাপ দিচ্ছে না। তাদের দলের একজন সদস্য শপথ নিয়েছেন। এ জন্য কেন সরকার তাঁকে চাপ দিতে যাবে। ওই সাংসদ নিজেই তো বলেছেন জনগণের চাপের কারণে তিনি শপথ নিয়েছেন।’ বিএনপির চেয়ারপারসনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সরকার আগ্রহ বা চাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে সরকারের কিছু করার নেই। প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন আসেনি। এখানে আমাদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তারা তাদের সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করে। এখানে সিদ্ধান্ত বিএনপির। সরকারের চাপ থাকবে কেন?
আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগী ঢুকছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে দলের সভানেত্রী ওই সাংবাদিকের কাছে এমন নেতাদের সম্পর্কে তালিকা চান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সারা জীবন আন্দোলন করেছেন, কষ্ট করেছেন। এখন যদি একটু ভালো থাকে, সেটা কি দোষের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে নয়, দেশের মানুষ ভালো আছে। আওয়ামী লীগ এলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়।
জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগ-শঙ্কা আছে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সব সময়ই উদ্বেগ হওয়ার কারণ আছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে সবার আগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সেখানে খ্রিষ্টানরা করেছে। শ্রীলঙ্কায় মুসলিমরা। এ জন্য আমি বলি, জঙ্গিবাদের কোনো ধর্ম নেই। দেশ নেই। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কিন্তু তারপরও শঙ্কা আছে। এটা এখন আন্তর্জাতিক একটা বিষয় হয়ে গেছে।’
বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের সমস্যার দায় বিদেশি সংস্থাকেও নিতে হবে
ভারত, রাশিয়া, জাপান ও চীন চায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোক কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের জোরালো ভূমিকা নেই, স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা যেতে চায় না। জোরও করতে পারি না। এর সঙ্গে বিদেশি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চায় না কক্সবাজার ছাড়তে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি নিজেদের থাকা, খাওয়ার সুব্যবস্থা চায়। সহজ যাতায়াত চায়। এ কারণে তারা কক্সবাজার ছাড়তে চায় না। অথচ ভাসানচরে নেওয়া গেলে রোহিঙ্গারা ভালো থাকতে পারত। তাদের জীবন এতটা অমানবিক হতো না।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবকেরা বেকার। বেকার থাকাটা ভালো নয়। তখন নানা চিন্তা মাথায় আসে। এদের সহজে জঙ্গিবাদে জড়ানো যায়। ব্যবহার করা যায়।
এখন সময় অনলাইনের
গণমাধ্যমের বিশেষ করে কাগুজে পত্রিকার খারাপ সময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যুগের চাহিদা বা প্রযুক্তির চাহিদা হলো অনলাইন সংবাদপত্রের। বিশ্বের অনেক দেশে বড় বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো এখন কেবল অনলাইনে আছে। কাগুজে পত্রিকা বের করে না।
সম্প্রচার মাধ্যম সম্পর্কে বলেন, ‘অনেকেই টেলিভিশনের জন্য আবেদন করছেন। আমি বলেছি দিয়ে দাও। এতে চাকরির বাজার বড় হবে।’
সরকারের ১০০ দিন নিয়ে আনন্দের কী আছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সরকারের ১০০ দিন নিরানন্দের। এখানে আনন্দের কী আছে। আর সরকার তো ১০০ দিন ধরে তো কোনো কাজ করছে না। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য আওয়ামী লীগ একাই এক শ।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিরানন্দে ভোগেন তাঁরাই নিরানন্দ খোঁজেন। এদের সবাইকে আমি চিনি। আমার অচেনা কেউ নেই।’