মেয়েটির বয়স ৩৪ বছর। মানসিকভাবে অসুস্থ। স্বামী ছেড়ে গেছে, বাবা নেই। বৃদ্ধা মা খোঁজ রাখতে পারেন না। এই বাড়ি সেই বাড়ি ঘুরে বেড়ান। ফলে মেয়েটির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছিলেন গ্রামের লোকজন। মেয়েটিকে দেখলেই তাড়া করছিলেন অনেকে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল মেয়েটির জীবন।
খবর পেয়ে গতকাল রোববার দুপুরে মেয়েটিকে উদ্ধার করেছেন পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার পল্লব ইবনে শায়েখ। পরে তাঁকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি মিলেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অন্যদিকে নিরাপদ আশ্রয় মিলেছে মেয়েটির।
স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েটির বাড়ি পাবনা জেলা সদরের হিমাইতপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। ছোটবেলায় তাঁদের বাবা মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেন। ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেছেন। ২০১২ সালে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন মা। আর বিয়েটাই কাল হয় মেয়েটির। স্বামীর বাড়িতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যে পড়েন তিনি। দিনে দিনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
২০১৮ সালে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মেয়েটি মায়ের কাছে চলে আসেন। কিন্তু বৃদ্ধা মা নিজেই শয্যাশায়ী। মেয়েকে দেখভাল করতে পারেন না। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ি, এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামে ঘুরে বেড়ান। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মেয়েটির এমন চলাফেরা নিয়ে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গে সবাই খারাপ আচরণ করছিলেন।
সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার পল্লব ইবনে শায়েখ বলেন, মেয়েটি সারাক্ষণ বাইরে থাকছিলেন। রাতে বাইরে ঘুমাতেন। এতে তিনি গ্রামের মানুষকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিলেন। নিজেও ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। খবর পেয়ে প্রথমে মেয়েটিকে উদ্ধার করে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে দুপুরে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে মেয়েটি নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
হিমাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুরো ইউনিয়নের মানুষ মেয়েটির পেছনে লেগেছিল। মানসিক হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে একদিকে গ্রামের মানুষের আতঙ্ক কমল, অন্যদিকে মেয়েটি নিরাপদ আশ্রয় পেল। এটি সত্যিই একটি ভালো কাজ হয়েছে। মেয়েটি এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মাসুদ রানা সরকার বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর মেয়েটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে আলাদা একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এরপর সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। কিছুদিন চিকিৎসায় থাকলে মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।