বাড়তি আয় নিঃশেষ বাড়তি দামে

আইএলও বলছে, ১০ বছরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি কমেছে বাংলাদেশে।

দেশে ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোটা চালের দাম ছিল গড়ে কেজিপ্রতি ২৬ টাকার কম। বাড়তে বাড়তে ২০২০-২১ অর্থবছরে একই চালের দাম ৫২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তার মানে হলো, চালের দাম এই সময়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, একই সময়ে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তবে এই বাড়তি আয় অনেকটা নিঃশেষ হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয়ে।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ভাষায় জনগোষ্ঠীর এই অংশ ছিল ‘শরীর নিমজ্জিত রেখে নাক ভাসিয়ে’। করোনাকালে তাঁদের আয় কমেছে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নিত্যপণ্যের চড়া দামের চাপ।

মানুষের জীবনযাত্রার মান তখনই উন্নত হয়, যখন ব্যয় বৃদ্ধির চেয়ে আয় বেশি হারে বাড়ে। তখন নিত্যপণ্য ও সেবা কেনার বাইরে মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনে বাড়তি ব্যয় করতে পারে। পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে। ভালো বাসায় থাকতে পারে। আবার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয়ও করতে পারে।

বিবিএস বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত মজুরি হার সূচক (কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ৪৪ পেশা ধরে হিসাব) বেড়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ। বিপরীতে মূল্যসূচক বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। ক্যাবের হিসাবে ঢাকায় ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। আর জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৯২ শতাংশ।

মাথাপিছু আয়ের বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সে ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে এই আয় ছিল ২ হাজার ৬৪০ ডলার (পিপিপি বা ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে), যা ২০২০ সালে ৫ হাজার ৩১০ ডলারে উন্নীত হয়। বৃদ্ধির হার ১০১ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ে উন্নতির হিসাব করার ক্ষেত্রে ফাঁকি হলো এই যে, এতে বৈষম্যের চিত্রটি আসে না। দরিদ্রদের আয় কমে যাওয়ার বিপরীতে ধনীদের আয় বৃদ্ধির কারণেও গড় মাথাপিছু আয় বাড়তে পারে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। একজন ধনীর আয় মাসে ১২ লাখ টাকা। বিপরীতে শ্রমিকের মজুরি ৯ হাজার টাকা। দুজনের মাথাপিছু আয় কিন্তু দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। আয়কাঠামোর নিচের দিকে থাকা শ্রমজীবী মানুষেরাই মূলত এখন কষ্টে রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

আকবর আলি খান

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমজীবী মানুষের আয় শতগুণ বাড়লেও তাতে কোনো লাভ নেই, যদি মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত মজুরি সেভাবে না বাড়ার কারণ কাজের খোঁজে থাকা মানুষের সংখ্যা বেশি, সে তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়ছে না। দেশে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাকে বলা হয় কর্মসংস্থানহীন।

শ্রমজীবী মানুষের আয় শতগুণ বাড়লেও তাতে কোনো লাভ নেই, যদি মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়।
আকবর আলি খান, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, চালের দাম বাড়লে সচ্ছল মানুষদের অসুবিধা হয় না, কারণ তার আয়ের খুব সামান্য অংশ চালের পেছনে যায়। কিন্তু নিম্নবিত্তের আয়ের বড় অংশ যায় খাদ্য কিনতে।

উল্লেখ্য, বিবিএসের হিসাবে দেখা যায়, ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। তা করোনার আগে কমে ২১ শতাংশে নামে (সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি)। অবশ্য করোনাকালে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশে উঠেছিল বলে দাবি করেছিল বেসরকারি সংস্থাগুলো। সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। যদিও নিজেরা কোনো জরিপ করেনি।

চাল-আটার দাম

বিবিএসের ২০০৯-১০ অর্থবছর ও গত জানুয়ারির গড় দাম বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোজ্যতেলের দাম ৫৭, চিনি ৬৯, লবণ ৬৬, মুরগি (বড় একটি) ৯৯ ও গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ১৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

চালের বিকল্প খাদ্য আটা। সেটার দামের হিসাব অবশ্য বিবিএসের পরিসংখ্যানে নেই। আরেক সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে দেখা যায়, ২০১০ সালের ৮ মার্চ এক কেজি প্যাকেটজাত আটা ছিল সর্বনিম্ন ২৩ টাকা। এখন তা সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। মানে হলো, দাম বেড়েছে ৭৪ শতাংশ।

আরও পেছন তাকিয়ে দ্রব্যমূল্য কেমন ছিল, তা দেখা যাক। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মোটা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি দুই টাকার মতো। মসুর ডালের দাম এর চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল, প্রতি কেজি ২ টাকা ২২ পয়সা। তখন সয়াবিন তেলের চল ছিল না, শর্ষের তেলের লিটার ছিল ১০ টাকার মতো (এখন ২৪০-২৯০ টাকা)। ক্যাবের হিসাবে, ২০০০ সালে ঢাকায় মোটা চালের কেজি ছিল সাড়ে ১৪ টাকা। আটাও মোটামুটি একই দরে পাওয়া যেত। ৩৯ টাকা লিটার দরে বিক্রি হতো সয়াবিন তেল। মসুর ডালের কেজি ছিল ৪০ টাকা।

পণ্যভেদে দাম বাড়ার কারণ ভিন্ন। ভোজ্যতেল, চিনি, ডালের মতো পণ্যের দাম বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল। আবার উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণেও দাম বাড়ে। চালের উদাহরণ দেওয়া যাক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একদিকে চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে সরকার ঘোষণা দিয়েও চাল আমদানি করতে পারেনি। চালের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে রাখা হয়েছে। ফলে সুরক্ষিত বাজারে বেশি দাম আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সংসারে চাল-ডাল কেনা যেমন অপরিহার্য, তেমনি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও বাসভাড়াও জরুরি সেবা। ক্যাবের হিসাব বলছে, ২০১০ সালের তুলনায় এখন এসব সেবার মূল্য দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। সম্প্রতি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওদিকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বাসাভাড়া।

বিগত এক দশকে জীবনযাত্রার মান কতটুকু বেড়েছে, জানতে চাইলে ঢাকার শেওড়াপাড়ার একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক দম্পতি রিয়াজুল ইসলাম ও রেহানা আক্তার বলেন, আগেও সাভারে একটি টিনের ছাউনির বাড়িতে এক কক্ষ ভাড়া নিতে থাকতেন। এখনো তা–ই। সপ্তাহে ছয় দিন এবং ছুটির দিনেও আধবেলা কাজ করেও কোনোরকমে খেয়েপরে বেঁচে আছেন।

বাড়েনি প্রকৃত নিম্নতম মজুরি

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘বৈশ্বিক মজুরি প্রতিবেদন: ২০২০-২০২১’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশভেদে নিম্নতম মজুরি ছিল ৪৮ ডলার (পিপিপি) থেকে ২ হাজার ১৬৬ ডলার। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল বাংলাদেশে (৪৮ ডলার)। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে নিম্নতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে।

আইএলও আরও জানিয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২২ দেশে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি বেড়েছে। কমেছে ৮টি দেশে। সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি বেড়েছে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায়। আটটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি কমেছে বাংলাদেশ (বছরে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ) ও শ্রীলঙ্কায়।

উল্লেখ্য, প্রকৃত মজুরি বাড়ার হার হিসাব করা হয় মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে। একজন শ্রমিকের মজুরি যদি ১০ টাকা বাড়ে, বিপরীতে নিত্যপত্রের দাম যদি ৬ টাকা বাড়ে, তাহলে প্রকৃত মজুরি বাড়ে ৪ টাকা।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষ চাপে পড়ে, এটা চিরায়ত বিষয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে যে আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে, তা তীব্রতর নয়। কারণ, আয় বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখনো মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। প্রকৃত মজুরি বেড়েছে। মানুষ গ্রামে এখন কৃষিকাজে যে মজুরি পান, তা দিয়ে অন্তত ১২ কেজি চাল কেনা যায়। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি কাটাতে সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। অর্থনীতিতে যাতে গতি থাকে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সে কারণে করোনাকালে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। দেশে ফেরত আসা কর্মহীন প্রবাসীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষের আরেকটু বেশি পাওয়া উচিত ছিল কি না—জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ন্যায়বোধ থেকে সেটা বলা যায়। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কালে দেশে দেশে বৈষম্য বেড়েছে। কোনো কোনো দেশ সেটাকে ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে, যেমন জাপান। তিনি বলেন, দেশে আয়বৈষম্য কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামে শহরের সুবিধা দেওয়ার কাজ চলছে। দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে মোটা চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

অবশ্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান হিসাব করে দেখান যে মূল্যস্ফীতি যেটা হয়েছে, তার কারণে প্রকৃত মজুরি বাড়েনি। তিনি বলেন, মজুরিসূচক হিসাব করা হয় ভিত্তিবছর ২০১০-১১ ধরে। আর মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয় ২০০৪-০৫ ভিত্তি বছর ধরে। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রেও ২০১০-১১ ভিত্তিবছর ধরলে দেখা যাবে, প্রকৃত মজুরি কমেছে। মূল্যস্ফীতি ও মজুরির ভিত্তিবছর একই হওয়া উচিত।

সেলিম রায়হান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। এ সময় মজুরি দিয়ে কত কেজি চাল কেনা যায়, তা বিবেচনা করা ঠিক নয়। শ্রমজীবী মানুষ কি মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফলমূল খাবে না?

আয় বেড়েছে কাদের

দেশের জিডিপি বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা ও নিম্নবিত্ত বিপুলসংখ্যক মানুষই এখন কষ্টে রয়েছেন। গত ডিসেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সব সময় গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। উদাহরণ দিয়ে এ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অবস্থা এমন, পানিতে সারা শরীর নিমজ্জিত রেখে নাকটা ভাসিয়ে রাখা। ঢেউ আসলে ডুবে যায়। এটা সুখকর অবস্থা নয়।’

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে বিপুল মানুষের এই ‘নাক ভাসিয়ে থাকা’ অবস্থার কারণ হলো আয়বৈষম্য বেড়েছে। বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় আয়ে ধনীদের হিস্যা বাড়ছে, দারিদ্র্যের হিস্যা কমছে। দেশের সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের প্রতি মাসের গড় আয় মাত্র ৭৪৬ টাকা। ধনীদের আয় ১১৯ গুণ বেশি। খানা আয়-ব্যয় জরিপ নিয়ে একটি সমালোচনা আছে যে জরিপকারীরা প্রকৃত ধনীদের বাসায় জরিপ করতে ঢুকতে পারেন না।

করোনাকালে আয় পরিস্থিতির কী চিত্র দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে ২০২০ সালের আগস্টে বিবিএস সীমিত পরিসরে একটি ধারণা জরিপ করেছিল। এতে দেখা যায়, ওই সময় পরিবারপ্রতি আয় ২০ শতাংশ কমে যায়। ৬৮ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছিল।

করোনাকালে দুই চিত্র

করোনাকালে আমরা দুটি ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। একটি হলো, বিলাসপণ্যের বিক্রি বাড়ছে। যেমন, ২০২১ সালে প্রাইভেট কার বিক্রি (নিবন্ধনের হিসাব ধরে) বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বিলাসবহুল গাড়ি স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল বা এসইউভি বিক্রি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। ফ্ল্যাট বিক্রির পরিস্থিতিও ভালো।

করোনাকালে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ১৮ হাজারের মতো বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশে গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ থাকা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩৯। এর আগে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় লিখেছিলেন, ১৯৭১-৭২–এ বাংলাদেশের কোটিপতির সংখ্যা ছিল দুজন, এখন (১৯৮৩) বলা হয়, তাদের সংখ্যা ২০০।

করোনাকালের বিপরীত চিত্রটি হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কান্নারত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির মুখ। যিনি বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি ৯ হাজার টাকা বেতনে আর চলতে পারছেন না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, তিন শ্রেণির মানুষ এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছেন। এক. দরিদ্র মানুষ, যাঁদের সামান্য মূল্যবৃদ্ধিতেই সংকটে পড়তে হয়। দুই. নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা বাজার থেকে পণ্যসামগ্রী কেনেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতিজনিত পরিস্থিতিতে তাঁকে সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। এঁরা বিপাকে রয়েছেন। তিন. এই শ্রেণি এখনো সঞ্চয় ভাঙেননি, তবে পরিবারের ব্যয় ঠিক রাখতে তাঁরা খরচ কমানোর চেষ্টায় রয়েছেন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পর্যালোচনায় দেশে সবারই আয় বেড়েছে। তবে একটি বড় অংশের আয় বেড়েছে তুলনামূলক কম। এতে বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।