বাম হাত দিয়ে ডান হাতটা খুঁজছেন রাজীব

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনকে শমরিতা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শমরিতা হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

শমরিতা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসক মো. হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাজীবের জ্ঞান আছে, কিন্তু একটা ঘোরের মধ্য আছেন। তাঁর সারা শরীরে ব্যথা। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তাঁকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁর বাহুর নিচ থেকে পুরোটাই কাটা পড়েছে। ক্ষতগুলো ঠিক করা হয়েছে। এখন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। এই আঘাত ছাড়া আর কোনো বড় আঘাত নেই।

মো. হোসেন বলেন, রাজীবের পরিবার জানিয়েছে, এখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছে পরিবার।

এর আগে রাজীব হোসেনের খালা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ওর জ্ঞান এখনো পুরোপুরি ফেরেনি। মাঝেমধ্যে সে শরীর নাড়াচ্ছে। বাম হাত দিয়ে ডান হাতটা খুঁজছে।’

রাজীব হোসেন

জাহানারা বেগম বলেন, ‘তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত ওষুধের দামসহ দেড় লাখ টাকা বিল হয়েছে। এর মধ্যে ওষুধের খরচ ছিল ১৭ হাজার। আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে পেরেছি। বাকি টাকা পরে দেব—এমন আবেদন লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। এখন ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি।’

রাজীবের মা-বাবা নেই। স্বজনদের সহৃদয় সহযোগিতায় কষ্টেসৃষ্টে পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন। থাকেন যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগের একটি মেসে।

হাসপাতালে রাজীবের মামা মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকারসহ সবার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। সুস্থ হলে প্রধানমন্ত্রী যেন রাজীবকে একটি চাকরি দেন—এমন আবেদন করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়েছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিক গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রুত তাঁকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সে হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।