বাবার মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ, ৮ বছর পর ধরা

ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ১১ কনস্টেবলের। জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আট বছর পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করছেন ১১ ব্যক্তি। সম্প্রতি প্রমাণ হয়েছে, চাকরির জন্য যে মুক্তিযোদ্ধার সনদ তাঁরা জমা দিয়েছিলেন, তা জাল। বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি নেন তাঁরা। তাঁদের বাড়ি জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায়। তবে তাঁরা এখন কোথায় চাকরি করছেন, তা জানা যায়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বছর ভুয়া সনদ দিয়ে পুলিশে চাকরি নেওয়ার দায়ে পাঁচ পুলিশ কনস্টেবলকে কারাদণ্ড দেন আদালত।

১০ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ শাখা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য ১১ জন যে সাময়িক সনদ জমা দিয়েছেন, তার একটিও সঠিক নয়। মন্ত্রণালয়ের সনদ বিতরণ রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

নথিপত্রে ঘেঁটে জানা গেছে, এই ১১ জন ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ছয় মাস প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৭ সালে তাঁদের সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তা তদন্তে পাঠানো হয়। এরপর সেই তদন্ত আর এগোয়নি।

তবে সনদ প্রতারণার অভিযোগে ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মডেল থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। পরে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে সনদের সত্যতা যাচাই করতে বলে। ১০ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, এই ১১ জন কনস্টেবলের কারও সাময়িক সনদ সঠিক নয়।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো চিঠি এখনো তিনি পাননি। তবে ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, এই দুটি মামলা তাঁর থানায় হয়েছিল। তাই এ–সংক্রান্ত সব নথি তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু এই কনস্টেবলরা কোথায় চাকরি করছেন, তা তিনি জানেন না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ শাখার উপসচিব দুলাল কৃষ্ণ রায় বলেন, ‘তাঁদের সনদ সঠিক নয়, এ কথা জানানোর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা পরিপত্র পাঠিয়েছি। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, এখন আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাময়িক সনদ দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখে গেজেট যাচাই করে নিতে পারবেন তাঁরাই।’

আমরা চিঠি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাঁরা নিজেদের বাবার ভুয়া পরিচয় উল্লেখ করে গর্হিত অপরাধ করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ড প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিব্রত করেছে।
ফারজানা জেসমিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাময়িক সনদে মুক্তিযোদ্ধার নাম খোকা মিয়া, পিতা মৃত আবেদ আলী শেখ। সাময়িক সনদের নম্বর ২৪৩৮। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ বিতরণ রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই সনদ নম্বরে মৃত চাঁদ মিয়া, পিতা বশির মিয়া উল্লেখ রয়েছে।

একইভাবে আবদুস ছামাদ, পিতা জোনাব আলী, সাময়িক সনদের নম্বর ২৪৪৫। কিন্তু রেজিস্ট্রারে এই সনদ নম্বরে নাম রয়েছে মৃত আ. কুদ্দুছের, যার বাবার নাম বছির উদ্দিন সরকার।

সাময়িক সনদে শাহাবউদ্দিন ফকির, পিতা আহম্মাদ ফকির, সনদ নম্বর ২৪৪৭। এই সনদের ক্রমিক নম্বরে নাম রয়েছে হাতেম আলীর। তাঁর পিতার নাম ফয়েজ উদ্দিন।

এ ছাড়া আবদুল হামিদ, জুলহাস উদ্দিন, আবদুল হালিম মণ্ডল, আবদুল ওহাব, শাহজাহান আলী, মোক্তার হোসেন, নাজমু সরকার ও আবদুস সামাদ মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নামে সনদ নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ফারজানা জেসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চিঠি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাঁরা নিজেদের বাবার ভুয়া পরিচয় উল্লেখ করে গর্হিত অপরাধ করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ড প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিব্রত করেছে।’

গত বছরও ভুয়া সনদ দিয়ে পুলিশে চাকরি নেওয়ার দায়ে পাঁচ পুলিশ কনস্টেবলকে কারাদণ্ড দেন আদালত। তাঁদের আড়াই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এরও আগে জয়পুরহাটে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি হওয়ার ঘটনায় পুলিশের ১৯ সদস্য এবং দুই কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।