বান্দরবান বিএনপিতে গৃহবিবাদ

বান্দরবান জেলা ও উপজেলা বিএনপিতে গৃহবিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমান জেলা কমিটি গত সপ্তাহে বান্দরবান সদর উপজেলা, আলীকদম ও পৌর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এই বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। জেলা কমিটির এই সিদ্ধান্ত মানতে চাইছেন না ভেঙে দেওয়া কমিটির নেতা-কর্মীরা। উল্টো বর্তমান জেলা কমিটিকেই অবৈধ আখ্যা দিচ্ছেন তাঁরা।

বহু বছর ধরে বান্দরবান বিএনপি দুটি পক্ষে বিভক্ত। দুপক্ষেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বোমাং রাজপরিবারের দুই প্রভাবশালী সদস্য। এঁদের একজন বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি মাম্যাচিং ও অন্যজন সাবেক সভাপতি সাচিংপ্রু জেরি। সম্পর্কে তাঁরা মামি-ভাগনে। গত ২ মার্চ সাচিংপ্রু জেরিকে জেলা কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর মাম্যাচিংকে সভাপতি এবং জাবেদ রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর মাম্যাচিং-জাবেদ কার্যত দলে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ দলের অপর পক্ষের নেতা-কর্মীদের।

দলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, কোনো চিঠিপত্র ছাড়াই মাম্যাচিং-জাবেদের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি গত ২৪ জুলাই আলীকদম উপজেলা কমিটি ভেঙে দেয়। এর দুদিন পর বান্দরবান সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া তিনটি কমিটিই সাবেক জেলা সভাপতি সাচিংপ্রু জেরির সমর্থক। এই সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছেন বলে তাঁরা দাবি করেন।

ভেঙে দেওয়া কমিটির নেতারা বলছেন, মাম্যাচিং-জাবেদের জেলা কমিটি সাংগঠনিকভাবে অবৈধ। সে কারণে উপজেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার আদেশ তাঁরা মানবেন না।

আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ‘অবৈধভাবে উপজেলা কমিটি ও পৌর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কোনো চিঠিপত্রও দেননি তাঁরা। বিষয়টি ফেসবুক মারফত জেনেছি। এ ব্যাপারে দলীয় মহাসচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। মাম্যাচিং ও জাবেদ রেজার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও অভিযোগ এনেছি আমরা। মহাসচিব বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন।’

ভেঙে দেওয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ২১ সদস্যের যে জেলা কমিটি ঘোষিত হয়েছে, সে কমিটির ১৪ জনই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ অবস্থায় আংশিক জেলা কমিটিই অবৈধ হয়ে গেছে। এ অবৈধ কমিটির নির্দেশ মানবে না উপজেলা ও পৌর বিএনপি।

 এ বিষয়ে জানতে বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি মাম্যাচিং ও সাবেক সভাপতি সাচিংপ্রু জেরিকে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, বিএনপির আদর্শের পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকায় তিনটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর কারও কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এতেই বোঝা যায় এ সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়েছে। কমিটি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে মহাসচিব তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলেও তিনি শুনেছেন।  এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেছেন, সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে জেলা কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন।