করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে এখন থেকে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। একই নির্দেশনায় অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে উপাসনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেউ এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাখাওয়াৎ হোসেন সই করা এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ভয়ানক করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা ছাড়া অন্য সব মুসল্লি নিজ নিজ বাসায় নামাজ আদায় করবেন। জুমার জামাতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। এটা সরকারের নির্দেশ। মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ অনধিক পাঁচজন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লি মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবাই কঠোরভাবে এই নির্দেশনা মানবেন বলে তিনি মনে করেন। অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ সময় সারা দেশে কোথাও ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলিগ তালিম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। সবাই ব্যক্তিগতভাবে তিলওয়াত, জিকির, ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করবেন। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এ সময় কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আচার–অনুষ্ঠানের জন্য সমবেত হতে পারবেন না।
সব ধর্মের মূলনীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ করা হলো। কোনো প্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণান করতে গিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলেছে, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যাপক সংক্রমণ এবং বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বলেছে, বিভিন্ন দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এ ধরনের বিস্তার ও প্রাণহানির ঘটনার উদাহরণ আছে। পবিত্র মক্কা, মদিনাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের মসজিদে মুসল্লিদের আগমন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সর্বসাধারণের আগমন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। গত ২৯ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং শীর্ষস্থানীয় আলেমরা মসজিদে মুসল্লি কম রাখার আহ্বান জানিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন দ্রুত ভয়ংকর অবনতির দিকে যাচ্ছে।