বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

রোববার পান্তা-ইলিশ খেয়ে নববর্ষের সূচনা হয় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে। চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এমন সাজ দুই শিশুর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রোববার পান্তা-ইলিশ খেয়ে নববর্ষের সূচনা হয় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে। চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এমন সাজ দুই শিশুর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে আগামীকাল সোমবার উদ্‌যাপিত হবে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। তবে বাংলাদেশে নতুন দিনপঞ্জি চালু হওয়ার পর থেকে সেখানে কার্যত নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে কলকাতার নববর্ষ পালনের কখনো এক দিন আগে; আবার কখনো একই দিন। যদিও ২০১৬ সালে একই দিনে দুই দেশে একই সঙ্গে পালিত হয়েছিল বাংলা নববর্ষ। কিন্তু এবার আবার সেই এক দিন আগে আজ রোববার বাংলাদেশের রীতি অনুযায়ী পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। সেই লক্ষ্যে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে রোববার দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে।

রোববার সকালে পান্তা-ইলিশ খেয়ে নববর্ষের সূচনা হয় কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে। বিকেলে উপহাইকমিশনের উদ্যোগে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন মুখোশ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং চিরায়ত বাংলার নানা প্রতীক নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই শোভাযাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরণির বাংলাদেশ গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। শেষ হয় উপহাইকমিশনে। এতে যোগ দেন উপহাইকমিশনের কর্মকর্তাসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এরপরই কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন চত্বরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন উৎসব।

উৎসবে অতিথিদের স্বাগত জানান কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান। অনুষ্ঠানে কলকাতার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের বাংলাদেশের নানান পদের খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পিঠাপুলি, মুড়িমুড়কি থেকে নানা ধরনের বাংলাদেশের খাবার এবং মিষ্টি। উপহাইকমিশন চত্বরে আয়োজন করা হয় নাগরদোলার। সেই ব্রিটিশ আমলের বায়োস্কোপও দেখানো হয় এখানে। বহু মানুষ সেই বায়োস্কোপে ছবিও দেখেন। বিকেল থেকে রাত অবধি চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুতুলনাচ, বাউলসংগীত, নৃত্য, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি থেকে সাংস্কতিক অনুষ্ঠান। আর এতে যোগদান করে বংলাদেশ থেকে আসা একটি নৃত্য দল। কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরাও এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

রোববার কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেল থেকে রাত অবধি চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি



সোমবার কলকাতায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা
আগামীকাল সোমবার কলকাতাসহ ভারতের বাংলাভাষী রাজ্য ও অঞ্চলে উদ্‌যাপিত হবে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। আর এই বাংলা নববর্ষকে ঘিরে এবারও কলকাতায় বের হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখে কলকাতায় ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। কলকাতাবাসীও গত দুই বছর ধরে দেখেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এত দিন ধরে কলকাতায় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের রেওয়াজ থাকলেও গত ২০১৭ সাল প্রথম কলকাতার রাস্তায় বের হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রার কথা কলকাতার মানুষ শুনেছে ঢাকা থেকে। তাই তো ঢাকার অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় ২০১৭ সালে প্রথম কলকাতার রাজপথে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। মানুষ ভাবতেই পারেনি মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের এত ভিড় হয়। রোদকে উপেক্ষা করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখেছিল কলকাতাবাসী। এবারও দেখবেন তাঁরা।

পয়লা বৈশাখে কলকাতাস্থ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন মুখোশ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং চিরায়ত বাংলার নানা প্রতীক নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই শোভাযাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরণির বাংলাদেশ গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। শেষ হয় উপহাইকমিশনে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

গত বছর সকাল সাড়ে আটটায় দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয়েছিল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার সেই শোভাযাত্রা নতুন নামে আয়োজন করেছে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র’। এই শোভাযাত্রা শেষ হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে বিদ্যার্থী ময়দান থেকে। এ ছাড়া আগামীকাল আরেকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে দক্ষিণ কলকাতার সুকান্ত সেতু থেকে। এর উদ্যোক্তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কলকাতা’ কমিটি।

বাংলা নববর্ষ পালনের রেওয়াজ সুদুর অতীত হতে চলে আসছে কলকাতায়। তবে বাংলাদেশে যেভাবে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়, সেভাবে কিন্তু কলকাতায় হতো না। এখন হচ্ছে। বাংলাদেশে অবশ্য আছে প্রাণের ছোঁয়া আর আবেগেভরা অনুষ্ঠান। নববর্ষের মেলা। সেই ইলিশ-পান্তা থেকে চিড়ামুড়ি, নারকেল, বাতাসা, কদমা আর দই–মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ। এখন কলকাতায়ও তা শুরু হয়েছে।

কলকাতাস্থ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বিভিন্ন মুখোশ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং চিরায়ত বাংলার নানা প্রতীক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবারও এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে বিষ্ণুপুর ও বিক্রমপুরের ঘোড়া, মুর্শিদাবাদের সোলার হাতি, কৃষ্ণনগরের ময়ুর, বাঘ, সিংহ, মাটির সরার ওপর নানা শিল্পকাজের সরা, একতারা, দণ্ড পুতুল, মুখোশ, হাতি, ঘোড়া, প্যাঁচা, কালীঘাটের পটচিত্র, পাখা, কুলো আরও কত–কী? শিশুরা সাজবে নানা রূপকথার সাজে। থাকবে সুন্দরবনের মানিক পীরের গান, গাজি পীরের গান আরও দুই বাংলার অতীত দিনের লোকগান, পুরুলিয়া ঘরানার নাচনি শিল্পী পোস্তবালার গান। এবার আরও থাকবে বিজয় সরকারের গানের ৫০ শিল্পীর দলও। থাকবে পুরুলিয়ার ছৌনৃত্য, থাকবে রাস্তাজুড়ে নানান আলপনা। এদিন সুন্দরবনেও বের হবে দুটি মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর আয়োজন করেছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কলকাতা’ কমিটি। আর গবেষণা প্রসার কেন্দ্র রাজ্যের ১১টি স্থানে বের করবে এই মঙ্গল শোভযাত্রা। আর নাচনি শিল্পী পোস্তবালা এবার উদ্বোধন করবেন মঙ্গল শোভাযাত্রার গবেষণা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানের।