প্রথম আলোকে রবার্ট ডিকসন

বাংলাদেশ চাইলে উন্নত সমরাস্ত্র বিক্রিতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেছেন, জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভালো বিনিয়োগ। আবার অফশোর ট্রোভাসের মতো আধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ সুরক্ষা ও আহরণে কার্যকর নৌযান। বাংলাদেশ চাইলে আধুনিক প্রযুক্তির এসব সমরাস্ত্র সরবরাহ করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অনুষ্ঠেয় প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপে সমরাস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন এ মন্তব্য করেন।

আজ বুধবার রাজধানীতে দুই দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনায় যে তিনটি বিষয় গুরুত্ব পাবে, তার মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটার বিষয়টি অন্যতম বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল বিকেলে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার তাঁর বাসায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানান, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমরাস্ত্র কেনাকাটা—এই তিনটি বিষয়ে সংলাপে আলোচনা হবে।

আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউরোফাইটার অত্যন্ত ভালো বিনিয়োগ। একই দাবি করা যায়, অফশোর ট্রোভাস জাহাজের ক্ষেত্রেও।
রবার্ট ডিকসন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার

আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আফগানিস্তান ও ইউক্রেন প্রসঙ্গ আসবে কি না, জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন বলেন, ‘আফগানিস্তান তো বটেই, আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিলে মিয়ানমারে যা ঘটে চলছে, তা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কাজেই এ অঞ্চলে নানাভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন। কারণ, এটি শুধু ইউরোপ নয়, সমগ্র বিশ্বে প্রভাব ফেলেছে।’

রবার্ট ডিকসন জানান, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশ আইপিএস নিয়ে তাদের কৌশল গ্রহণ করেছে। গত বছর যুক্তরাজ্যের সমন্বিত আইপিএস প্রকাশ করা হয়েছে। এ অঞ্চলকে ঘিরে সারা বিশ্বের ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মতো দুই বন্ধুরাষ্ট্র এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশে জঙ্গি বিমান বিক্রির বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপে বিষয়টি আলোচনায় আসবে কি না, জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন বলেন, ‘সমরাস্ত্র কেনাকাটার বিষয়টি আলোচনায় আসবে। তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু নিয়ে আমি মন্তব্য করতে রাজি নই।’

যুক্তরাজ্য এসব সমরাস্ত্র কেনার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে না। বাংলাদেশ যদি এসব কিনতে আগ্রহী থাকে, তবে যুক্তরাজ্য তা আনন্দের সঙ্গে সরবরাহ করতে রাজি আছে।
রবার্ট ডিকসন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার

বাংলাদেশের কাছে আধুনিক সমরাস্ত্র বিক্রিতে যুক্তরাজ্যের আগ্রহের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের কী প্রয়োজন, সেটা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে। গত সপ্তাহে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর আবার প্রমাণিত হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনী কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

রবার্ট ডিকসন বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউরোফাইটার অত্যন্ত ভালো বিনিয়োগ। একই দাবি করা যায়, অফশোর ট্রোভাস জাহাজের ক্ষেত্রেও।’

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদ সুরক্ষা ও সুনীল অর্থনীতির বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই অফশোর ট্রোভাসের মতো জাহাজ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা ও আহরণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে, যুক্তরাজ্য এসব কেনার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে না। বাংলাদেশ যদি এসব কিনতে আগ্রহী থাকে, তবে যুক্তরাজ্য তা আনন্দের সঙ্গে সরবরাহ করতে রাজি আছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবিষয়ক মহাপরিচালক পর্যায়ে প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। নানা ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।