যুক্তরাজ্য থেকে কোন কোন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ সরকার ফেরত চেয়েছে, তা প্রকাশ করেননি ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন। তিনি বলেছেন, অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাঁর দেশ ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর নয়, আদালতের ওপর নির্ভর করে।
যুক্তরাজ্যে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ মাসের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট সেক্রেটারি ম্যাথিউ রাইক্রফটের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা সহযোগিতা, উগ্রপন্থীদের মোকাবিলায় সহায়তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি। ২০১৮ সাল থেকে তাঁকে ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগে জোর দিচ্ছে। এখন যুক্তরাজ্যের কাছে এমএলএটির বিষয়টি আবার তুলে ধরার পেছনে তারেক রহমানকে আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টার যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে গত মাসে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের ভার্চ্যুয়ালি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ডিকাব টক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। জবাবে রবার্ট ডিকসন বলেন, কোন কোন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে, সেটা জনসমক্ষে বলাটা ঠিক হবে না। কারণ, যুক্তরাজ্য থেকে এ ধরনের কাউকে ফেরত পাঠানো একটি আইনি প্রক্রিয়া। ফলে এই সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করে না। সিদ্ধান্তটি আদালতের ওপর নির্ভর করে। আর আদালত তার নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রায় দিয়ে থাকেন। যদিও এ ধরনের ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জোরালো আইনি লড়াই চালিয়ে থাকে। তবে আদালত তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেকগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর পর তাঁর শাস্তি কেমন হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে হাইকমিশনার বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে সুস্পষ্ট নীতি অনুসরণ করা হয়। কেউ যদি ঘৃণা বা উসকানিমূলক মন্তব্য করে, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি কেউ সীমারেখা ছাড়িয়ে যায় এবং তা যুক্তরাজ্য সরকারকে জানানো হলে তদন্ত করে দেখা হয়।
যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য–সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত
রবার্ট ডিকসন বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ সুগম করতে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য–সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
রবার্ট ডিকসন জানান, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসার নীতি কী হবে, তা নিয়ে স্বাধীনভাবে বিবেচনা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বিনিয়োগ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এইচএসবিসি, ইউনিলিভারসহ যুক্তরাজ্যের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ পেলে যুক্তরাজ্যের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে ব্যবসা করতে আসবে।
ডিকাব সভাপতি পান্থ রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন।