ঢাকা কাঁপাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসল ট্রফি। বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই। সেই উন্মাদনা এখন এই ট্রফিকে ঘিরেও।
ট্রফিটি যে দেশ জেতে, সে দেশই বয়ে নিয়ে বেড়ায় পরবর্তী চার বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের গৌরব। তবে বিশ্বকাপ আসরের আগে ট্রফিটি ঘুরে বেড়ায় বিশ্বের নানা প্রান্তে। বিশ্বভ্রমণের সেই যাত্রার অংশ হিসেবে ৮ জুন ঢাকায় পৌঁছেছে ট্রফিটি।
১২ মে দুবাই থেকে কাতার বিশ্বকাপ সামনে রেখে কোকা-কোলার আয়োজনে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণের শুরু হয়। ৫৬টি দেশ ঘোরার পথে ফিফা বিশ্বকাপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কোকা-কোলার উদ্যোগে ট্রফিটি বাংলাদেশে এসেছে।
কী আছে কাচঘেরা এই ট্রফিতে? একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য কেনই–বা এত আকুল হয়ে থাকে মন?
ঝকঝকে সোনালি আভা দেখে তো সাদা চোখেই বোঝা যায়, এটি সোনার তৈরি ট্রফি। একটি ম্যালাকাইট ভিত্তির ওপর এই ট্রফি নির্মিত। এর উচ্চতা ৩৬.৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৬.১ কেজি। এতে ১৮ ক্যারেটের ৫ কেজি সোনা ব্যবহৃত হয়েছে। এর ম্যালাকাইটে তৈরি ভিত্তিমঞ্চের উচ্চতা ১৩ সেন্টিমিটার। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ট্রফিটির শুধু আর্থিক মূল্যই দেড় লাখ মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক মূল্যের বাইরেও স্বর্ণালি ট্রফিটির মূল্য রয়েছে। সব মিলিয়ে যা এক কোটি ডলারের কম নয়।
বিশ্বভ্রমণে কাচঘেরা এই ট্রফিকে সবাই আপন করে নিতে পারেন। কিন্তু কাচের ভেতরে ছুঁয়ে দেখায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যে কেউ চাইলেই স্বর্ণের এই ট্রফি ছুঁতে পারবেন না। শুধু ফিফার নির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা আর বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড় এবং সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের রয়েছে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ।
পাঠক, নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে, কাচের বাইরে দিয়ে ধরা যাচ্ছে। কিন্তু ছোঁয়াছুঁয়িতে কেন এত বারণ? কঠিন নিষেধাজ্ঞা?
১৯৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছিল বর্তমানে যে ট্রফিটি আছে, তার চেয়ে ভিন্ন ধরনের ট্রফি, যার নাম ছিল ভিক্টরি ট্রফি। এই ট্রফির ডিজাইনারের নাম ছিল নাইকি। আর গ্রিসের বিজয়ের দেবীর নাম ছিল নাইকি, এবং তাঁরই চেহারার আকারে বানানো হয়েছিল ট্রফিটি। ১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে উরুগুয়ে প্রথম জিতে নেয় এই ভিক্টরি ট্রফি।
পরবর্তী সময়ে বানানো হয় জুলেরিমে ট্রফি। ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ ওয়েস্ট মিনস্টারের সেন্ট্রাল হলে একটি প্রদর্শনী থেকে এই ট্রফিটি কাকতালীয়ভাবে চুরি হয়ে যায়। অথচ তখন আর মাত্র চার মাস পরেই বিশ্বকাপ শুরু হবে—এমনই একটি আমেজ তৈরি হয়েছিল সারা ফুটবলবিশ্বে। তবে সৌভাগ্যবশত চুরি হওয়ার সাত দিন পরই দক্ষিণ লন্ডনের একটি সাভারবান গার্ডেন থেকে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় ওই ট্রফিটি উদ্ধার করে পিকলস নামের একটি কুকুর। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, স্টিভ ক্রুক তার কিছু সহচর নিয়ে ট্রফিটি চুরি করেছিল।
এর পর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করে রাখার প্রয়োজনে জুলেরিমে ট্রফির হুবহু নকল একটি ট্রফি তৈরি করে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। নকল ট্রফিটি এখন ম্যানচেস্টারের একটি ফুটবল মিউজিয়ামে রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক সেই জুলেরিমে ট্রফিটি আর নেই।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য সেই সময়কার জুলেরিমে ট্রফির বদলে অন্য আরেকটি ডিজাইনের ট্রফি চ্যাম্পিয়নদের দেওয়ার সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছিল ফিফা থেকে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন সাতটি দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন নিয়েছিল ফিফা। সবশেষে ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিকার ডিজাইনটিকে সর্বসম্মতিক্রমে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি হিসেবে বেছে নেয়। এই ট্রফি ইতালির স্ট্যাবিলিমেন্টো আর্টিস্টিকো বেরটোনি কোম্পানিতে তৈরি করা হয়েছিল। ট্রফিটিতে দেখতে পাওয়া যায়, দুজন মানুষ পৃথিবীকে উঠিয়ে ধরে আছে। বিশ্ব এখন তাদের হাতের মুঠোয়। শতকোটি কাঠখড় পুড়িয়ে এই সোনার হরিণ খেলোয়াড়েরা নিজেদের হাতের মুঠোয় আনেন। তাই একটু ছুঁয়ে দেখা তো তাঁদেরই মানায়।