দেশের অনেক তরুণ হাঁটছেন নতুন স্টার্টআপ বা উদ্যোগ তৈরির পথে। তাঁদের বেড়ে উঠতে প্রয়োজন যথাযথ সহযোগিতা। সিলিকন ভ্যালিতে যেভাবে স্টার্টআপ বা উদ্যোগগুলো যথাযথ প্ল্যাটফর্ম পেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে, আমাদের দেশের উদ্যোগগুলোর সামনেও তেমন সুযোগ রয়েছে। তাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে রবির আর-ভেঞ্চারসের মতো নানা প্ল্যাটফর্ম। প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের স্টার্টআপগুলোকে যথাযথভাবে সাহায্য ও দিকনির্দেশনা দিলে তা বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে। এই খাতে স্টার্টআপগুলোর পাশাপাশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী ধারণাকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যেমন সম্ভব, তেমনি বেকারত্ব দূর করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এর ফলে সিলিকন ভ্যালির বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মতোই আমাদের দেশের উদ্যোগগুলো একসময় বড় ইউনিকর্নে পরিণত হবে। বর্তমানে দেশের স্টার্টআপ বা উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরার জন্য রবির আর-ভেঞ্চারস, স্টার্টআপ বাংলাদেশের মতো বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য বা সেবা উদ্ভাবনের ধারণা তুলে ধরে যথাযথ মেন্টরিং, দিকনির্দেশনা ও বিনিয়োগের মতো সুযোগ পাচ্ছেন। স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য গড়ে ওঠা ৫ প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জেনে নিন:
আর-ভেঞ্চারস
দেশীয় স্টার্টআপকে বিনিয়োগ সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্বমঞ্চে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এখন পরিচিত নাম আর-ভেঞ্চারস। দেশের ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মোবাইল অপারেটর রবি। স্টার্টআপের জন্য আর-ভেঞ্চারস প্ল্যাটফর্ম এখন অনেক তরুণের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম। এর আওতায় বিজয়ী উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তা দলকে ৮৪ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থায়ন করে থাকে অপারেটরটি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যবসায়িক ধারণা জমা দিতে হয়। এ প্ল্যাটফর্ম থেকে মেন্টরশিপ ও সিড তহবিল পান উদ্যোক্তারা। সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে স্টার্টআপের তথ্য পৌঁছানোর লক্ষ্যে চূড়ান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একটি জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে যার গ্র্যান্ড ফিনালে বা চূড়ান্ত পর্ব আগামী ৭ ডিসেম্বর সম্প্রচারিত হবে। www. robiventures. com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে কোনো ব্যক্তি বা দল এই প্রতিযোগিতার জন্য তাদের ব্যবসায়িক ধারণা জমা দিতে পারেন। প্রতিটি স্টার্ট-আপকে প্রতিষ্ঠিত করতে চার থেকে ছয় মাসের নিবিড় প্রশিক্ষণের আওতায় থাকতে হয়। এই পর্যায়ে বিজয়ীদের ধারণা বাস্তবায়নের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সে দিক-নির্দেশনা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হয় আর ভেঞ্চারসে। ডিজিটাল উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য আর-ভেঞ্চারসের প্রথম পর্বের আয়োজন সফল হয়েছে। প্রথমবার আয়োজিত কর্মসূচি থেকে নির্বাচিত ৫ উদ্যোগ এখন সফলভাবে চালু রয়েছে।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ
গত আগস্ট মাসে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির নীতিগত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। স্টার্টআপ মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সিড স্টেজে সর্বোচ্চ এক কোটি এবং গ্রোথ গাইডেড স্টার্টআপ রাউন্ডে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। ২০১৬ সাল থেকে স্টার্টআপ বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ইতিমধ্যে আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় গত ২ বছর ধরে প্রযুক্তি নির্ভর স্টার্টআপ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের ধারণা জমা দিয়ে উদ্যোগ সম্পর্কে জানানোর সুযোগ পান।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ একটি বৈশ্বিক স্টার্টআপ প্ল্যাটফর্ম যা প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এক মঞ্চে নিয়ে আসে। চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সারা বিশ্বে ৪০ টির বেশি আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয় স্টার্টআপের এই বিশ্বকাপে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্টার্টআপগুলো সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পায়। করপোরেট অংশীদারত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি থাকে এখানে। প্রতিযোগিতার পুরস্কার এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। সম্প্রতি বাংলাদেশেও এ প্ল্যাটফর্মে আবেদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরাও নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করেন বিনিয়োগ করার জন্য।
জিপি এক্সেলারেটর
মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন উদ্যোক্তাদের তুলে ধরতে চালু করেছে জিপি এক্সেলারেটর নামের একটি কর্মসূচি। স্টার্টআপদের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক ডলার তুলতে সহযোগিতা করে এ প্ল্যাটফর্ম। উদ্যোক্তারা এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে কীভাবে একটি স্টার্টআপের কাজ চালাতে হয় তা শিখতে পারেন। নির্বাচিত স্টার্টআপরা প্রত্যেকেই পান ১২ লাখ টাকার মূলধন, ১০০০ ডলার সমমূল্যের অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস ক্রেডিট, জিপি হাউসে কাজ করার সুবিধা এবং ব্যবসা দ্রুততর করার জন্য প্রাসঙ্গিক শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুবিধা।
টাইগার চ্যালেঞ্জ
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এমআইটি সলভ নামের প্রতিযোগিতার আদলে এমআইটির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে টাইগার আইটি ফাউন্ডেশন। দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলগুলো প্রায় দুই মিলিয়ন ডলারের আর্থিক, কারিগরি এবং বিনিয়োগ সুবিধা পেয়ে তাকে। বাংলাদেশের কল্যাণে অবদান রাখবে এমন যেকোনো টেকসই ও উদ্ভাবনী ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতেই এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। আয়োজনটি হয় দুটি পর্বে। বাংলাদেশ পর্বে ফাইনালিস্টদের মধ্যে থেকে একটি উদ্যোগকে সেরা ঘোষণা করা হয়। ছাত্র, শিক্ষক, স্টার্টআপ কোম্পানি কিংবা হবু উদ্যোক্তা-যেকেউ এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে পারেন।
দেশের নবীন স্টার্টআপগুলোকে এগিয়ে নিতে আর-ভেঞ্চারসসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নতুনদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ পাওয়া, মেন্টরিং, পরামর্শ দিয়ে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো যথাযথ অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে।