বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে পাশে থাকবে জাপান: রাষ্ট্রদূত

বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি
 ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে, যতক্ষণ না দেশটি ভিশন ২০৪১–এর লক্ষ্যগুলো অর্জন করছে।

বাংলাদেশে জাপানের ও জাইকার (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ চলছে উল্লেখ করে ইতো নাওকি বলেছেন, ঢাকা মেট্রোরেল, বিমানবন্দর সম্প্রাসারণ প্রকল্প ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এসব অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই জরুরি। একই সময়ে সামাজিক উন্নয়নেরও গুরুত্ব আছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন করাও প্রয়োজন।

রাজধানীর গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে আজ সোমবার দুপুরে এক সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এসব কথা বলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) ও জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের নেওয়া বাংলাদেশে উইমেন পিস ক্যাফের উদ্যোগ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময়’শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশে উইমেন পিস ক্যাফের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘উইমেন পিস ক্যাফে উদ্যোগটির অর্জন দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। আমি মনে করি, এই কমিউনিটিভিত্তিক প্রকল্পটি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে আনতে আরও কাজ করবে। নারীর অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের জন্য পিস ক্যাফে একটি অনুকরণীয় মডেল।’

সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, ‘পিস ক্যাফে মডেল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের বাইরে এমন কার্যক্রম সমাজের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠান থেকে বলা হয়, সিপিজে ও ইউএন উইমেনের তত্ত্বাবধানে ও জাপান সরকারের অর্থায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়—এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেন পিস ক্যাফের কার্যক্রম চলছে। শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর ক্ষমতায়ন, উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারীদের নিয়ে কাজ ও উদ্যোক্তা তৈরির সৃষ্টিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে এই প্রকল্প।

অনুষ্ঠানে ‘লার্নিংস ফ্রম দ্য উইমেন পিস ক্যাফে ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উপস্থাপনা করেন সিপিজের গবেষণা সমন্বয়কারী মো. বদিউজ্জামান ও প্রকল্প পরিচালক জিয়া উদ্দিন। সেখানে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এই প্ল্যাটফর্মটি শান্তি ও সামাজিক সংহতিকে উৎসাহিত করতে ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাণ ও সামাজিক উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬৮০ নারী শিক্ষার্থীকে সামাজিক উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ, ২০০ শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল মাধ্যমবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১১৬ জন পিস অ্যাম্বাসেডর ও ২৯০ জন পিস স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হয়েছে, যাঁরা সমাজের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন। ১০০টি ভিডিও নির্মাণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই উইমেন পিস ক্যাফের কার্যক্রমের প্রচার ২০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ দিয়া নন্দা বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় চারটি উইমেন পিস ক্যাফে করা হয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্নভাবে এই প্রকল্পের আওতায় নানামুখী কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন। একটা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইউএন উইমেনের সহযোগিতা থাকবে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আরও বক্তব্য দেন সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, পরিচালক শাহরিয়ার সাদাত, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট তানিয়া শারমিন প্রমুখ।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। এ পর্বের শুরুতে ‘উইমেন পিস অ্যাম্বাসেডর উদ্যোগের অভিজ্ঞতা ও এর সঠিক চর্চা’বিষয়ক পিস আড্ডা হয়। এ পর্বে অংশগ্রহণকারী চার শিক্ষার্থী বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

এ পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল এডুকেশনের ডিন সামিয়া হক ও বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মুশফিকা জামান। সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডেভিড ডাওল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে উইমেন পিস ক্যাফে মডেলটি ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একটি গঠনমূলক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলবে।

দ্বিতীয় পর্বের অতিথিদের সঙ্গে পিস অ্যাম্বাসেডর ও পুরস্কারপ্রাপ্তরা

অনুষ্ঠানের শেষাংশে ১৫ শিক্ষার্থীকে ‘উইমেন পিস অ্যাম্বাসেডর অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনজন হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ষা আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হালিমা হাসিন ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার। এ ছাড়া ভিডিও প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এম সাজ্জাদ কবির, দ্বিতীয় হয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিদ আরিয়ান এবং তৃতীয় হয়েছেন যৌথভাবে আমেরিকান ইন্টারন্যাশাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান ও নর্থ সাউথের মেহেরিন নুসরাত। তাঁদের প্রত্যেককে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।