ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের চিঠির জবাবে ইইউ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে

ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল। তিনি বলেছেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্তেফানিৎসের চিঠির জবাব দিতে গিয়ে জোসেফ বোরেল বাংলাদেশ সম্পর্কে এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে একই রকমের ব্যবস্থা চেয়ে জোসেফ বোরেলের কাছে ইভান স্তেফানিৎস চিঠি লেখেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ইভান স্তেফানিৎসকে ১৮ মার্চ লেখা চিঠিতে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখ করেননি জোসেফ বোরেল। তবে তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যকে এটা বলে আশ্বস্ত করেছেন যে মানবাধিকারসহ সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

জোসেফ বোরেল বলেন, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন সত্ত্বেও মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি (সিএটি) ও জাতিংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক মাত্রায় নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন।

ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত তদন্তের পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বোরেল বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)। এ আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার যে ইঙ্গিত বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।

স্তেফানিৎসকে আশ্বস্ত করে জোসেফ বোরেল বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিকের পাশাপাশি মানবাধিকার বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। তিনি জানান, আসন্ন ইউ-বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিশন এবং সাবগ্রুপ অন গুড গভার্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এসব বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যের কাছে লেখা চিঠিতে ইউরোপীয় কমিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ, দুর্যোগপ্রবণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত দশকে দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পেয়েছে। বাণিজ্য, উন্নয়ন সহযোগিতা, অভিবাসন, জলবায়ু মোকাবিলায় উদ্যোগ, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারির প্রশংসা করে থাকে ইইউ।

জোসেফ বোরেল লিখেছেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের ভূমিকার আমরা বিশেষ প্রশংসা করি।’