বাংলাদেশে তাদের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির জন্য চীনের হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি শেভরন। এ দেশে থাকা ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ এ বছরেই বিক্রি করতে চায় মার্কিন এ কোম্পানিটি। হিমালয় এনার্জি কোম্পানির হাতে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এ কোম্পানিটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। তবে শেভরন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে তারা বিস্তারিত কিছু জানে না।
শেভরনের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট গ্যাসের অর্ধেকই শেভরন নিয়ন্ত্রিত গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে। এখন কোম্পানিটি এসব ক্ষেত্র হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেবে। হিমালয় এনার্জি কোম্পানিটি চীনের জেনহুয়া অয়েল এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিএনআইসি করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান।
২০১২ সালে হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সিএনআইসি। চীন সরকারের অর্থে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সারা বিশ্বে চীনা কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে থাকে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গ্যাসক্ষেত্র বিক্রি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে জেনহুয়া অয়েল এবং শেভরনের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
শেভরন করপোরেশন বাংলাদেশে তাদের সব সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে হিমালয় এনার্জির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে কত টাকায় এই ব্যবসার হাতবদল হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি কোম্পানিটি। এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের তিনটি ব্লকে বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব এখন পাবে হিমালয় এনার্জি। বাংলাদেশের প্রতিদিনের গ্যাস সরবরাহের অর্ধেকের বেশি ওই তিনটি ক্ষেত্র থেকেই আসে।
শেভরনের একজন মুখপাত্র এক ই-মেইলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আজ সোমবার বলেছেন, ‘শেভরনের গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির জন্য চুক্তি হয়েছে। তবে চুক্তির মূল্য প্রকাশ করা হবে না। কারণ, আমরা চুক্তির শর্ত অনুসারে আমরা বিস্তারিত প্রকাশে স্বাধীন নই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেনহুয়ার এক মুখপাত্র চুক্তির ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, চুক্তিটি চীনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের ওপর নির্ভর করবে।
এদিকে শেভরন বাংলাদেশের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথম আলোকে বলে, এ ব্যাপারে তাদের কিছু জানা নেই।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনো কিছু জানি না।’
শেভরনের সম্পদ কিনে নেওয়া যায় কি না, এ বিষয়ে সরকার ভাবনাচিন্তা করছে বলে রয়টার্সকে বলেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শদাতা উড ম্যাকেনজি ব্যাপারটি মূল্যায়ন করছে যে এটা দেশের জন্য লাভজনক হবে কি না। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পরামর্শদাতাদের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি না। আমরা বিশ্বাস করি, শেভরন আমাদের অনুরোধে সম্মান দেখাবে।’
শেভরন ২০১৫ সালের অক্টোবরে বলেছিল, ২০১৭ সালের মধ্য এক হাজার কোটি ডলার পরিমাণ সম্পদ বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের তাদের গ্যাসক্ষেত্র এবং ভূতাত্ত্বিক প্রকল্পসহ তারা এই সময়ের মধ্য বেচে দেবে।