পর্যটন শুল্কে ছাড়ে ভুটানে বেড়াতে যাওয়ার দিন ফুরিয়ে এল। বাংলাদেশ, ভারত ও মালদ্বীপের পর্যটকদের জন্য নতুন ভ্রমণ কর জারি করেছে ভুটান সরকার। ভুটানের পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কারণে এবার থেকে অপূর্ব সুন্দর দেশটিতে ভ্রমণের জন্য দিতে হবে অর্থ। রাজকীয় ভুটানের আইনসভার এই সিদ্ধান্ত এ বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে এই সিদ্ধান্তে ভুটানের পর্যটক কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, ভুটান সরকারের নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ৫ বছর বয়সী বিদেশি কাউকেই এন্ট্রি ফি দিতে হবে না। ৬-১২ বছর পর্যন্ত বয়সীদের দিতে হবে অর্থ। বাংলাদেশ, ভারত ও মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য এ নিয়ম চালু হচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ গুলট্রাম (বাংলাদেশি ১ হাজার ৪৩৬ টাকার মতো)। আর ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য ৬০০ গুলট্রাম লাগবে। এই নতুন ফির নাম সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ)৷
ভুটান সরকার জানিয়েছে, প্রতিবছর বহু বিদেশি পর্যটক (বিশেষ করে ভারত, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ) ভুটান বেড়াতে যান। পর্যটকদের ভিড়ের চাপ সামলাতেই এই ফি চালু করা হলো।
১৯৪৯ সালে ভুটান-ভারত বন্ধুত্বের চুক্তি অনুসারে ভারতীয়রা বিনা ফিতে ভ্রমণ করতে ভুটানে যেতেন। আগামী জুলাই মাস থেকে সেই নিয়ম পাল্টে যাচ্ছে। তবে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের দিতে হতো জনপ্রতি ২৫০ ডলার। সেটি একই রকম থাকছে।
ভারতের একটা বড় অংশের মানুষের কাছে হাতের নাগালে সুইজারল্যান্ড মানেই ভুটান। বিশেষ করে ভারতের উত্তরবঙ্গের কাছে হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের আশপাশের এলাকার পর্যটকদের কাছে ভুটান সহজে ভ্রমণের দেশ। আর বড় কারণ ভিসা লাগে না। পাসপোর্ট থাকলেই চলে যাওয়া যায় ভুটান। ভারতের জন্য পাসপোর্ট না থাকলেও পারমিট বা অনুমোদন থাকলেই ভুটান যাওয়া যায়। আগে বাংলাদেশ, ভারত ও মালদ্বীপের পর্যটকদের ভুটানে বেড়াতে যেতে ভ্যালিড ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট থাকলেই হতো। কোনো এন্ট্রি ফি লাগত না। পাসপোর্ট হলেই হতো। তবে এবার অর্থ গুনেই ভুটানে যেতে হবে।
ভারত ও বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে ভুটান গেলে দেশটির অভিবাসন দপ্তর ফুন্টশেলিং থেকে এন্ট্রি পারমিট নিতে হয়৷ আর যাঁরা বিমানে ভুটান যান, তাঁদের পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পারমিট নিতে হয়। সেই এন্ট্রি পারমিট শুধু থিম্পু ও পারোর জন্যই।
ভুটান সরকার জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই থেকেই চালু হয়ে যাবে নয়া ফি৷ অতএব ফ্রিতে ভুটানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে জুলাই মাসের আগেই।
পৃথিবীতে পর্যটকদের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয়, ভুটান তার মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের দিনে বিভিন্ন ফি বাবদ ২৫০ ডলার ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে ৬৫ ডলার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি এবং ৪০ ডলার ভিসা প্রসেসিং ফি। এত দিন আঞ্চলিক, অর্থাৎ ভারতীয় ও বাংলাদেশি পর্যটকদের কিছুই দিতে হতো না, কিন্তু এখন থেকে আঞ্চলিক পর্যটকদের মাথাপিছু দিনপ্রতি ১৬ দশমিক ৮৫ ডলার ডলারের বেশি দিতে হবে।
সম্প্রতি ভুটান পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পর্যটকদের উচ্চমানের পরিষেবা দেওয়াই এই নীতি পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। গত ১০ বছরে পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় পরিষেবার মান রক্ষা করা যাচ্ছিল না দাবি করেছে তারা।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে মোট ২ লাখ ৭৪ হাজার পর্যটক ভুটানে যান। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২ লাখই ছিলেন ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের। তার মধ্যে আবার ভারতীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার। পর্যটন শুল্কে ছাড়ই এর মূল কারণ বলে দাবি করেছে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়।
জলবিদ্যুতের পর পর্যটনই ভুটানে রাজস্বের সবচেয়ে বড় খাত। ভুটান সরকারের এক প্রতিনিধি ভারতীয় পত্রিকা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, পর্যটন নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চোখে ধুলো দিয়ে তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা পর্যটকদের অত্যন্ত কম দামে ঘর ভাড়া দেয় কয়েকটি সংস্থা। এই ধরনের বেআইনি ‘গেস্ট হাউস’ এবং ‘হোম স্টে’ পরিষেবা বন্ধ করার বিষয়টিও এই নতুন নীতি প্রণয়নে পেছনে বিবেচনা হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বেলায় ব্যাপারটা মাশুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভারতের বেলায় এর কিছুটা রাজনৈতিক রূপ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। বছরখানেক আগে ডোকালামে ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ফলে এর একটা রাজনৈতিক কারণ আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারতীয় পর্যটক কমাতে এই সিদ্ধান্ত।
তবে এই সিদ্ধান্তে ভুটানের পর্যটক কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশিদের ভুটান ভ্রমণে খরচ বাড়ছে