বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে আইপিএসে কাজ করতে পারে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র

ডিক্যাব আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে
ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক বিশেষ দূত গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হালনাগাদ করা ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের (আইপিএস) সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলের যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে। যেহেতু দুই পক্ষই ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, বাংলাদেশ যে জায়গাগুলোতে কাজ করতে চায়, সেখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাব আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন এ তথ্য জানান।

গত মাসে ঢাকা সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএসে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, অন্তর্জাল (ইন্টারনেট) নিরাপত্তা, তথ্য যোগাযোগসহ সহযোগিতার নানা উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশ যেখানেই চায়, সেখানেই কাজ করার সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের মতো কোনো দেশ আইপিএসের কোনো উপাদানে সহযোগিতায় যুক্ত হলো, নিরাপত্তার মতো অন্য উপাদান থেকে দূরে থাকল—এই সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএসে পাঁচটি (সহযোগিতার) উপাদান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইপিএসে সাতটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলোতে যথেষ্ট সামঞ্জস্য যেমন আছে, তেমনি দুই পক্ষের অগ্রাধিকারও প্রায় কাছাকাছি। ইইউ চায় ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর যেন স্বাধীন ও অবারিত থাকে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অগ্রাধিকারে মিল আছে এবং বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তারা একই ধরনের চিন্তা করে; তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আর সব কটি উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বাংলাদেশ যেখানে কাজ করতে চায়, সেখানে কাজ করার সুযোগ আছে।’

ভিসেনটিনের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে ও দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্কের বদলে তারা এখন সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করছে এবং ইইউর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে সহযোগিতার জন্য আলোচনা চলছে।

চীনকে নিতে বাধা নেই ইইউর

আইপিএসকে চীনের বিরুদ্ধে একটি কৌশল হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বেইজিং। এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আইপিএসের জন্য চীন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেন, ‘আমরা চীনের অন্তর্ভুক্তি চাই। আমরা সব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা চাই। কোনো ধরনের সাংঘর্ষিক সম্পর্কে জড়াতে চাই না।’

ইইউর আইপিএস–বিষয়ক বিশেষ দূত বলেন, ‘ইইউর সঙ্গে চীনের সম্পর্কের মাত্রাটা জটিল। একই সঙ্গে ইইউর অংশীদার, প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বেইজিং আমাদের সহায়তা করেছে। পরিবেশ উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে বলেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আবার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তারা আমাদের প্রতিযোগী এবং এটিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মানবাধিকার বা আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ না করায় চীনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতবিরোধ আছে। ইইউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউর বিরুদ্ধে।’

সংযুক্তিতে বিশেষ মনোযোগ আইপিএসে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইপিএসের সাতটি উপাদানের মধ্যে সংযুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইইউর বিশেষ দূত। গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেন, ‘সাতটি উপাদানের মধ্যে সংযুক্তিতে ইইউ সবার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। আমরা এশিয়ায় আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এর মধ্যে রয়েছে মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ।’

অবকাঠামো উন্নয়নে ইইউকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে উল্লেখ করে গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেন, ইইউর মোট বিনিয়োগ ১১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন (১১ দশমিক ৬ লাখ কোটি) ইউরো। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ইউরো, চীনের ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ইউরো ও জাপানের ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউরো। এখানে সরকারি ও বেসরকারি খাত বা আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা টেকসই প্রকল্পে অনুদান বা ঋণ দিতে পারবে।

রোহিঙ্গায় নজর সরেনি

মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিসেনটিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিয়েছে। এটিকে আমরা অস্থায়ী একটি সমাধান মনে করি। একে স্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখাটা সমীচীন হবে না।’

রাখাইনের পরিস্থিতি সহায়ক হলে তা রোহিঙ্গাদের আদি নিবাসে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করবে উল্লেখ করে ভিসেনটিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য মানবিক সহায়তা তহবিলের পাশাপাশি উন্নয়ন সহায়তা তহবিল এখানে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সহায়তায় ৪০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে ইইউ। আমাদের কাছে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ

গ্যাব্রিয়েল ভিসেনটিন বলেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপের দোরগোড়ায় যুদ্ধ ডেকে এনেছে। এই যুদ্ধের মানবিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক মূল্য সারা বিশ্ব উপলব্ধি করছে। রাশিয়ার এই আগ্রাসন ইইউর জন্য নানামুখী চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এটি জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার নিন্দা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত দুটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হওয়া ইস্যুটির প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলে জানান ইইউর বিশেষ দূত। জাতিসংঘের সবশেষ ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন।