বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের আরও এক শিক্ষার্থী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ৪০০৬ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
২২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
সাক্ষী সাইফুল ইসলাম আদালতকে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি হলের ৪০০৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। পরে তিনি ২০১১ নম্বর কক্ষে যান। সেখানে দেখেন, আবরার চেয়ারের ওপর বসে আছেন। তখন জেমি আবরারের ল্যাপটপ নিয়ে ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। আবরারের ল্যাপটপ আর মুঠোফোন চেক করেন মাজেদুরসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে একজন আবরারকে বলেন, ‘তোর ফোনে শিবিরের নাম কেন? রাত ৯টার দিকে ২০১১ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন ১৫তম ব্যাচের মেহেদি হাসান রবিন, অনিক সরকার ও জিয়ন। মেহেদী হাসান রবিন আবরার ফাহাদকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বল, তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’ জবাবে আবরার বলেন, তিনি শিবির করেন না। এভাবে কিছুক্ষণ তাঁরা জেরা করতে থাকেন।
সাক্ষী সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, জেরা করার সময় মেহেদি হাসান রবিন আবরারকে চশমা খুলতে বলেন এবং আবরারকে তিন থেকে চারটি চড় মারেন। এরপর ইফতি মোশাররফ ও অনিক সরকার আবরারকে মারতে থাকেন। রাত ১০টার দিকে তিনি খাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে খাওয়াদাওয়া শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলে প্রবেশ করেন। আবার রাত দেড়টার সময় চা পানের জন্য হলের বাইরে যান তিনি। চা পান শেষে হলের দোতলায় একজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, আবরারের অবস্থা খুব খারাপ। তখন তিনি ২০০৫ নম্বর কক্ষে যান। সেখানে আবরারকে শার্ট পরানো হয় এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আবরারকে যখন হলের দোতলার সিঁড়ির কাছে আনা হয়, তখন আবরার ফাহাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন সেখানে তাঁকে নামিয়ে রাখা হয়। তিনি খেয়াল করেন আবরারের শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। তখন তিনি আবরারের হাত-পা মালিশ করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর বুয়েটের চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে আবরারের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান তরফদার, প্রশান্ত কর্মকার, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল গণি, রেজাউল ইসলাম, আজিজুর রহমান প্রমুখ।
গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২ সেপ্টেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।