বর্ষা এলেই বরাদ্দ মেলে ওয়াসার

টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীরা। গতকাল ঢাকার পূর্ব জুরাইনের হাজী কে আলী রোডে হাঁটুপানিতে গর্ত দেখে দেখে চলছে এলাকাবাসী। ছবি: প্রথম আলো
টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীরা। গতকাল ঢাকার পূর্ব জুরাইনের হাজী কে আলী রোডে হাঁটুপানিতে গর্ত দেখে দেখে চলছে এলাকাবাসী।  ছবি: প্রথম আলো

বর্ষা এলেই বিশেষ বরাদ্দ মেলে ওয়াসার। এবারও মিলেছে ৪০ কোটি টাকা। ওয়াসার দাবি, এই টাকায় খাল খনন, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করা হবে। এসব করেই ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের এই বরাদ্দকে ‘সাহায্য মঞ্জুরি’ বলছে ওয়াসা।

১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা শহরের পানিনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ফলে নিয়মিত নর্দমাগুলো সচল রাখা ও পরিষ্কার করার দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা এলেই বরাদ্দ নেওয়ার কথা মনে পড়ে ওয়াসার।

বর্ষার আগে কেন বরাদ্দ চায় ওয়াসা, জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন বর্ষা, তখনই তো নর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। আগে করলে তো ড্রেন ভরে যাবে। তাই আমরা বর্ষার আগেই এ বরাদ্দ চেয়ে থাকি। এবার অবশ্য অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছি।’ তাকসিম এ খান আরও বলেন, ‘এবার জলাবদ্ধতা তেমন হবে না, আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত রয়েছি।’

ওয়াসা সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে ওয়াসা বলেছে, গত কয়েক বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কয়েক শ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইনের সংযোগ ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রচুর বালু ও মাটি ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া কার্পেটিং ও পুনঃকার্পেটিং করার কারণে ম্যানহোলগুলো ঢেকে গেছে এবং ক্যাচপিটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বর্ষায় এসব ক্যাচপিট নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করতে চায় ওয়াসা। এ ছাড়া বেশির ভাগ খালের পাশে খননযন্ত্র পৌঁছানোর রাস্তা না থাকায় খাল খননের জন্য বুলডোজার প্রয়োজন। ময়লা অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত ডাম্প ট্রাক না থাকায় ডাম্প ট্রাক সংগ্রহ জরুরি। ওয়াসার মতে, এ ছাড়া ১৬টি পাম্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বড় ধরনের মেরামত এ রক্ষণাবেক্ষণকাজ করা প্রয়োজন। এসব করতেই তাদের এত টাকার প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়াসা ঢাকা মহানগরের পানিনিষ্কাশনের জন্য ৭৪ কিলোমিটার খাল রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত কঠিন বর্জ্য, নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণ বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলার কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ভাসমান কঠিন বর্জ্য অপসারণের পর দু-এক দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আগে খালগুলো নগরের ভেতরে বিভিন্ন জলাশয়ের মধ্য দিয়ে নদীতে পড়ত এবং জলাশয়গুলো জলাধার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওয়াসা বক্স কালভার্টগুলো সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যানহোল নির্মাণ করবে। প্রতিবছর এ মঞ্জুরি সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পেলেও এবার ৪০ কোটি টাকা এ কাজে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রতিবছর বর্ষার আগে ওয়াসা নর্দমা পরিষ্কারের কাজটি শুরু করে জানুয়ারি থেকে।

মন্ত্রণালয়ের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা

জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যেখানে ১৭টি কাজ দ্রুত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘সচিবালয় এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার সব সময় সক্রিয় থাকবে ‘কুইক রেসপন্স’ টিম। দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। এই দল কোথাও জলাবদ্ধতা হলে দ্রুত তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা অপসারণের কাজ সমন্বয় করবে।

ঢাকা মহানগরে বেশি জলাবদ্ধতা হয় এমন সাতটি এলাকা বিশেষ নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সচিবালয়, মিরপুরের রূপনগর, সাংবাদিক কলোনি, রোকেয়া সরণি, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, শান্তিনগর-মালিবাগ, মতিঝিল এবং নিকুঞ্জ ১ ও কুড়িল উড়ালসড়ক। এসব এলাকায় বিদ্যমান পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জাফর আহমেদ খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে ওয়াসার জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। ওয়াসা খাল খনন করলে আশা রাখি কিছুটা সমস্যার সমাধান হবে। আমরা কিছুদিন পর খাল খননের বিষয়টি দেখতে যাব।’

সচিব আরও বলেন, ‘আমি ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের কাছে গতবারের নেওয়া পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা বলছে, দুই ঘণ্টার
মধ্য পানি নেমে গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’