জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬–এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য দেন দুদকের পরিচালক মনজুর মোর্শেদ। তিনি এ মামলার বাদী।
দুদক পরিচালক মনজুর মোর্শেদ আদালতকে বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তাঁকে সম্পদের হিসাব দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। গত বছরের ১ আগস্ট তিনি দুদকে সম্পদের হিসাব জমা দেন। সেখানে তিনি সর্বমোট ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেখান। জমা দেওয়া সম্পদের হিসাব যাচাই করার জন্য চলতি বছরের ১৩ জুন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মনজুর মোর্শেদ আদালতকে আরও বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিআইজি মিজান অবৈধ অর্থ দিয়ে কাছের আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ কিনে তা কৌশলে নিজে ভোগদখল করেন। মিজানুর রহমান তাঁর ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ২৪ লাখ ২১ হাজার ২২৫ টাকা দিয়ে গুলশান-১–এর পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে একটি দোকান বরাদ্দ নেন। ওই দোকান তাঁর স্ত্রীর নামে ভাড়া গ্রহণ করে নিজের দখলে রাখেন। এ ছাড়া মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর কারওয়ান বাজার ওয়ান ব্যাংকে একটি ফিক্স ডিপোজিট হিসাব খোলেন। সেখানে ৩০ লাখ টাকা জমা রাখেন তিনি। দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই মিজানুর রহমান সেই টাকা তুলে নেন। সুদসহ টাকার পরিমাণ হলো ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা, যা তিনি তাঁর সম্পদবিবরণীতে জমা দেননি। এ ছাড়া মিজানুর রহমান তাঁর ভাই মাহমুদুর রহমানের নামে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৯ টাকা দিয়ে বেইলি রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। মাহবুবুর রহমানের ফ্ল্যাট কেনার বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। ওই ফ্ল্যাটটিও মিজানুর রহমানের দখলে আছে। এ ছাড়া মিজানুর রহমান ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর নামে একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনেন, যার দাম ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা। এভাবে আসামি মিজানুর রহমান অপরাধলব্ধ অর্থ দিয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ কিনেছেন, যে তথ্য তিনি গোপন করেছেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ২৪ জুন ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, তাঁর ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে মাহমুদুল হাসান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলার বিচার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এ চলমান। মামলার অপর আসামি হলেন দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। ওই মামলার বাদী দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আদালতে বলেছিলেন, আসামি খন্দকার এনামুল বাছির দুদকের কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।
অন্যদিকে, ডিআইজি মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান—এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে স্বীকার করে নেন।