সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমায় জেলা ও উপজেলা শহরের বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও গ্রামের মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
হবিগঞ্জে বন্যার কারণে আট দিন ধরে ছয়টি উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। সিলেট শহরে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর নেত্রকোনায় ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় সোয়া লাখ মানুষ অবস্থান করছেন।
সুনামগঞ্জে গতকাল শনিবারও রোদ ছিল। পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি হয়নি। এ সময় পাহাড়ি ঢলও নামেনি। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো তলিয়ে আছে। আর গ্রামে বাড়িঘর থেকে পানি না মানায় ফিরতে পারছে না অনেকে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, তাঁদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৪০টির মতো পরিবার আছে। কারণ, পানিতে এখনো তলিয়ে আছে বাড়ি।
বন্যার কারণে হবিগঞ্জের ছয়টি উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে আট দিন ধরে। জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৮৮টি গ্রামের ২০ হাজার ৮৯০ জন গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।
নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের মুক্তাহার গ্রামের মনির মিয়া বলেন, রাত হলে অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। বর্ষার সময় ডাকাতির আশঙ্কা আছে। এ কারণে রাতে গ্রামবাসীকে পালাক্রমে পাহারা দিতে হয়।
নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় বন্যায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমায় এরই মধ্যে কোনো কোনো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরেছে। ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ আছে। বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি না নামায় ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক পরিবার বাড়িতে ফিরতে পারছে না।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলা। পাঁচটি উপজেলায় এখনো পানিবন্দী তিন লক্ষাধিক মানুষ।
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গতকাল সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে নগরের যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদীঘির পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
শাহজালাল উপশহর এলাকার এ ব্লকের বাসিন্দা রাজিউল করিম (৫২) বলেন, আগে পানির স্রোত ছিল, এর কারণে ময়লা–আবর্জনা নেমে যেত। তবে এখন সেটি নেই। পানি কমেছে কিন্তু দুর্ভোগ এখন আরও বেশি বেড়েছে।
নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ২০ জুন পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। এরপর ২১ জুন সন্ধ্যায় ওই পয়েন্টে পানি ছিল বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে। তবে ২২ জুন থেকে দফায় দফায় পানি কমতে থাকে। গতকাল বেলা তিনটায় পানি ছিল বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক,সুনামগঞ্জ এবং প্রতিনিধি, সিলেট, নেত্রকোনা, নীলফামারী ও হবিগঞ্জ]