বন্ধুরাষ্ট্রের ‘পরামর্শে’ বর্ষবরণে কঠোর নিরাপত্তা

মঙ্গলবার রমনা বটমূলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছু বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে উগ্রবাদীদের তৎপরতার খবর দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজধানীর রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০০১ সালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের উৎসবে হামলার ঘটনা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এবার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও উগ্রবাদীদের তৎপরতার খবর আছে।

আজ মঙ্গলবার রমনা বটমূলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষবরণ উৎসবের সময়সীমা বিকেল পাঁচটা থেকে কমিয়ে বেলা দুইটা করা হয়েছে। সময় কমানোর কারণ পবিত্র রমজান মাস।

বাংলা সন ১৪২৯-এর প্রথম দিন আগামী বৃহস্পতিবার। এদিন রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবার বেলা একটার পর আর উৎসব এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের আগে নিরাপত্তাতল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। শোভাযাত্রা চলার সময় কেউ মাঝখান থেকে ঢুকতে পারবেন না।

রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এর আশপাশের এলাকাগুলোতে বর্ষবরণের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ডিএমপির পক্ষ থেকে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের আগে সবার নিরাপত্তাতল্লাশি করা হবে। এবার উৎসব প্রাঙ্গণে কোনো খাবারের দোকান থাকবে না। তাই শিশুদের উৎসব প্রাঙ্গণে আনাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। মুখোশ পরা ও ভুভুজেলা বা উচ্চ শব্দ তৈরি করে, এমন কোনো কিছু ব্যবহার করা যাবে না।

বর্ষবরণের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সব জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা যাতে সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপরও যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে ‘ইভাকুয়েশন প্ল্যান’ (উদ্ধার পরিকল্পনা) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবার নারীদের ‘ইভ টিজিং’ থেকে রক্ষায় সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

বর্ষবরণ সামনে রেখে ডগ স্কোয়াড দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হচ্ছে অনুষ্ঠানের এলাকা

পুলিশের দায়িত্ব ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু তা না করে এভাবে উৎসবের সময় বেঁধে দেওয়ার কারণ কী এবং ভবিষ্যতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠান চালানো কোনো বিবেচনাতেই ঠিক নয়।

যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে

পয়লা বৈশাখ ঢাকার কিছু এলাকায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সেগুলো হলো বাংলামোটর-হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন, পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং, বকশীবাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি, শহীদুল্লা হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর ও নীলক্ষেত-টিএসসি।

মানুষকে চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বিকল্প সড়কগুলো হলো মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাব-নিউমার্কেট-আজিমপুর-বকশীবাজার-চানখাঁরপুল-গুলিস্তান, রাসেল স্কয়ার-সোনারগাঁও-রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান, মহাখালী-সাতরাস্তা-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান, ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও, ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমণি-নাইটিঙ্গেল-পল্টন-মতিঝিল, কাঁটাবন-হাতিরপুল-বাংলামোটর-সোনারগাঁও-ফার্মগেট ও কাঁটাবন, হাতিরপুল-বাংলামোটর-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমণি ক্রসিং-গুলিস্তান-মতিঝিল।