গত শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে র্যাব–১০–এর সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তি পেশায় ট্রাকচালক। তাঁর নাম শহীদুল ইসলাম শফিক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় যে ট্রাকের চাপায় র্যাব সদস্য মো ইদ্রিস নিহত হন, সেই ট্রাক তিনি চালাচ্ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে র্যাব।
অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, নিহত হওয়ার আগে সপ্তাহখানেক তিনি কোথায় ছিলেন, সে সম্পর্কে তাঁরা জানেন না।
শহীদুল ইসলামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দুর্মুঠ গ্রামে। তিনি থাকতেন শহরের নান্দিনা রেলস্টেশনের পেছনে শ্বশুরবাড়িতে। গত শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার খেজুরবাগ সাত পাখি স্বপ্নধরা আবাসিক এলাকায় র্যাব–১০–এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হন বলে জানায় র্যাব। এর পরই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় র্যাব একটি মামলা করে। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসেন নিহত ব্যক্তির নাম–পরিচয় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
শহীদুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শাহবাগ থানা থেকে তাঁকে ফোন করে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়। কীভাবে তাঁর মৃত্যু, সে সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ। তাঁকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলা হয়।
বিষয়টি তিনি তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী কুইনকে জানালে তিনিও বিশ্বাস করেননি। পরে মৃতদেহের ছবি পাঠিয়ে তাঁদের দ্রুত আসতে বলা হয়। মর্গে আসার পর তাঁরা দেখেন শহীদুলকে গোসলের পর কাফনের কাপড় পরিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। তাঁরা শুধু মুখটুকু দেখেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃতদেহ নিয়ে তাঁরা ঢাকা ছাড়েন ও জামালপুরের দুর্মুঠে দাফন করেন।
কী কারণে শহীদুলকে মরতে হলো, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই তাঁর পরিবারের। শহীদুলের স্ত্রী কুইন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
আর তাঁর ভাই বলেছেন, বছর দুয়েক আগে তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। সে সময় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। মাস চারেক জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান শহীদুল। এরপর থেকেই তাঁদের সঙ্গে শহীদুলের মনোমালিন্য হয়।
এদিকে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মো. ইদ্রিসকে গাঁজা বহনকারী একটি ট্রাক পিষে দিয়েছিল। ওই ঘটনায় ভালুকা থানায় র্যাব বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। আলাদাভাবে র্যাব কেরানীগঞ্জে একটি অভিযান পরিচালনা করছিল। ওই সময়ে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে র্যাবের গুলি বিনিময় হয়। এতে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর আঙুলের ছাপ ও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে দেখা যায় এই ব্যক্তিই ১৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব সদস্যের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছিলেন।