রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিরতিহীন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে টিকিটের সঙ্গে বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। আজ শনিবার থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। শনিবার সকালে যেসব যাত্রী এই ট্রেনে করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক খাবারের বিল দিতে হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খন্দকার শহিদুল ইসলাম বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে এই ট্রেনের যাত্রীদের আর বাধ্যতামূলক খাবারের বিল দিতে হচ্ছে না। এখন থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।’
খন্দকার শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের ট্রেনের খাবারের মানও ভালো না। এই খাবারের দামটাও একটু বেশি ছিল। যাত্রীরা মনে করছেন, ট্রেনের সময়টাও এমন ছিল যখন এই দামের খাবারের প্রয়োজন পড়ে না। এসব কারণে মন্ত্রণালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই যাঁরা ১৮ মে তারিখের টিকিট কিনেছেন, তাঁরাই এই সুবিধা পেয়েছেন। এখন সবাই এই সুবিধা পাবেন।’
বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত বাতিল করায় এখন থেকে টিকিটের সঙ্গে খাবারের বিল বাবদ ১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে না যাত্রীদের। এতে করে ৮৭৫ টাকার এসি শ্রেণির টিকিট এখন ৭২৫ টাকায় কিনতে পারবেন যাত্রীরা। আর শোভন শ্রেণির ৫২৫ টাকার টিকিটের দাম পড়বে ৩৭৫ টাকা।
এর আগে ৬ মে রেলমন্ত্রীকে বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত বাতিলের অনুরোধ জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম তাঁকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান তখন বলেছিলেন, ‘খাবারের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি রাজশাহীবাসীসহ সব যাত্রীর প্রত্যাশা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে ট্রেনে খাবার বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত বাতিল করে ঐচ্ছিক করার পক্ষে মত দিয়েছি। মন্ত্রী বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত বাতিলে সম্মত হয়েছেন। ট্রেনের যাত্রীরা ইচ্ছা হলে খাবার কিনে খাবেন, না হলে খাবেন না। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। দ্রুত ট্রেনে খাবার বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্ত বাতিল হবে।’
৫ মে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একই আহ্বান জানিয়েছিলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
৫ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস রাজশাহীবাসীর বহুল প্রত্যাশিত একটি ট্রেন। নির্বাচনের আগে আমার ৪৪ দফার অন্যতম ছিল এই ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ট্রেনে ১৫০ টাকার বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই ট্রেনটির ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়েছেন। কাজেই যাত্রীদের স্বার্থে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়কে স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শিগগিরই একটি চিঠি দেব। আশা করি তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ৫ মে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিটের সঙ্গে বাধ্যতামূলক খাবারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন।
গত ২৫ এপ্রিল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন। ২৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনটি যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ট্রেনটিতে সংযুক্ত রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। ট্রেনটিতে থাকছে রিক্লিনার চেয়ার। আছে ওয়াই-ফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে। যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে।