রংপুরের বদরগঞ্জে দুটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের ছররা গুলিতে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে পুলিশ ওই দুটি কেন্দ্রে আকস্মিক ছররা গুলি চালিয়ে কেন্দ্র দখলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
গুলিবিদ্ধ তিন ব্যক্তিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য সাতজন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ভয়ে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হননি।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রংপুর-২ আসনের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর কালজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটাররা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছিলেন। বেলা সোয়া দুইটার দিকে বদরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পিকআপ ভ্যানে করে ওই কেন্দ্রে ঢুকেই গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নারী ও পুরুষেরা বিভিন্ন দিকে ছুটে চলে যান। এ সময় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ মধুপুর কালজানী গ্রামের শামীম আহম্মেদ, এনামুল হক, আফতাবুর রহমানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন একই গ্রামের ইমরান আলী (৩৫), বাবু মিয়া (৫০), আবদুল হালিম (৪০), রায়হান আলী (২২), আবদুল হক, ইকবাল হোসেন ও আবদুর রহমান। তাঁরা বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ রায়হান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে চলছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে এখানে গোলাগুলি শুরু করে।
আহত বাবু মিয়া বলেন, তাঁর পেটে, হাতে, গলা ও মাথায় সাতটি ছররা গুলি লেগেছে। তাঁর অভিযোগ, ভোটকেন্দ্র থেকে ৩০০ গজ দূরে তিনি পানের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ পুলিশের একটি গাড়ি কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে গোলাগুলি শুরু করে। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে।
ভোটার মাহাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৫ থেকে ৬ শ নারী ভোটার ওই ভোটকেন্দ্রে ছিলেন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা খুব কম ছিল। পুলিশ গুলিবর্ষণ করে কেন্দ্র থেকে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্র দখলে নেয়।
কালজানী এলাকার বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল মাবুদ (৪৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রোত কোনো সমস্যা আছিল না। সবাই ভালো করি ভোট দিচ্ছিল। হঠাৎ পুলিশ গাড়ি নিয়্যা আসি গুলি করিয়া ভোটারদের মারপিট করি ভাগে দেয়। পুলিশ ক্যামন এ্যাংকা হয়। ভালো কেন্দ্রোত ওরায় আসি গুলি করি সউগ দখলে নেছে। ওটে আর কাকো ঢুকির দেয় নাই।’
ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্য সামছুজামান, মমতাজ বেগম, রঞ্জিনা বেগম ও আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, কেন্দ্রের ভেতরে ভোট গ্রহণ ভালোভাবে চলছিল, যা ঘটেছে তা কেন্দ্রের বাইরে। কেন্দ্রের ভেতরে কোনো গন্ডগোল হয়নি।
অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি নিয়ে এসে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে ভোটারদের মধ্যে গন্ডগোল দেখতে পাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চার রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। কী কারণে গুলিবর্ষণ করল পুলিশ, সেটা বুঝতে পারলাম না।’
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাইরে গন্ডগোল হয়েছে। বেলা ২টা ১৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
অন্যদিকে বদরগঞ্জ উপজেলার মৌয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ পুলিশ কেন্দ্রে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে সেখানেও ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আসাদুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মাদ আলী সরকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মণ্ডলের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, রংপুর-২ আসনের প্রায় সব কেন্দ্রেই নৌকার পক্ষে ভোট ডাকাতি হয়েছে। পুলিশ বিনা উসকানিতে কয়েকটি কেন্দ্রে গুলি করে কেন্দ্র দখলে নিয়েছিল।
রংপুর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মাদ আলী সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতি করে যদি নৌকাকেই জেতাতে হয়, তবে ভোট গ্রহণ ও এত আয়োজনের দরকার কী ছিল?
বদরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মৌয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণের সময় গন্ডগোল শুরু হলে সেখানে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের লোকজন প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোট ডাকাতি করেছে। কোন দেশে বাস করছি আমরা? মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারও আওয়ামী লীগ সরকার হরণ করেছে।’