বদরগঞ্জে গুদামে ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের আশঙ্কা

এক ব্যবসায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তিনি তা গদিঘরে জড়ো করেছেন। এ ধান তিনি অটোরাইস মিলে বিক্রি করবেন। জেলেপাড়া গ্রাম, বদরগঞ্জ, রংপুর, ১৮ জুন
ছবি: প্রথম আলো

চলতি বোরো মৌসুমে ৩০ জুনের মধ্যে বরাদ্দের বিপরীতে খাদ্যগুদামগুলোতে ৭৫ ভাগ ধান-চাল ক্রয় করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু রংপুরের বদরগঞ্জ খাদ্যগুদামে ২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ১ মাসে কেনা হয়েছে ৪২০ মেট্রিক টন এবং ২ হাজার ১৩ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ১ মাস ১০ দিনে কেনা হয়েছে মাত্র ৫১০ মেট্রিক টন।

স্থানীয় বাজারে ধান–চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রয়াভিযান অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে বলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন। এ অবস্থায় নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বদরগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদামে গত ২৮ এপ্রিলে ধান এবং ৭ মে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। কিন্তু ১ মাস পেরিয়ে গেলেও চুক্তিবদ্ধ ৫৩ চালকলমালিকের মধ্যে ২২ জন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গুদামেই আসেননি।

বদরগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে গুদামে ধান-চাল কেনার সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্ট বেঁধে দিয়ে চলতি ৩০ জুনের মধ্যে বরাদ্দের ৭৫ ভাগ কেনার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সোমবার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহের অগ্রগতি পর্যালোচনামূলক সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ৩০ জুনের মধ্যে বোরো সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭৫ ভাগ পূরণে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় তিনটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, আজ শনিবার বদরগঞ্জে বিআর ১৫ ও ২৮ জাতের বোরো ধান প্রতি মণ (২৮ কেজি) বিক্রি হয়েছে গড়ে ৭১০ টাকায়।

রাধানগর দক্ষিণ খামারপাড়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝামেলা হয়। একটু ধুলা–পাতান থাকলে নেয় না। আবার যতই শুকান না কেন, ওরা (গুদামের লোকজন) বলে মিটার পাস হয় নাই। এত ঝামেলা না করে বৃহস্পতিবার বাজারে প্রতি মণ (২৮ কেজি) বিআর ১৫ জাতের ধান বিক্রি করেছি ৭২০ টাকা দরে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চালকলমালিক বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে ৪০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার চুক্তি করেছি। কিন্তু এবার বাজার বেশি হওয়ায় আপাতত গুদামে চাল দিচ্ছি না। বাজার কমার অপেক্ষায় আছি।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) সোহেল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন বাজারে ধান–চালের দাম বাড়ছে। এ কারণে অনেক কৃষক গুদামে ধান না দিয়ে বাজারেই বিক্রি করছেন। চুক্তিবদ্ধ কিছু মিল–চাতালমালিকও গুদামে এখন পর্যন্ত চাল দেননি। আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করে যাব। সময় আছে, দেখা যাক কী হয়।’

উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ধানের দর বেশি হওয়ায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। চুক্তিবদ্ধ ৫৩ চালকলমালিকের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩ জন বরাদ্দ পাওয়া চাল সমুদয় গুদামে দিয়েছেন। ২৮ জন অল্প করে চাল দিচ্ছেন। বাকি ২২ চালকলমালিক এখনো গুদামেই আসেননি। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা কিছুটা বেকায়দায় পড়েছি।’