প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে সুইচ চেপে প্রধানমন্ত্রী একযোগে এই সম্প্রচার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন।
এর মাধ্যমে দেশের সম্প্রচারশিল্প এক নতুন যুগে প্রবেশ করল। কারণ, এর ফলে বিদেশি স্যাটেলাইট সংস্থাগুলোকে দেওয়া বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সক্ষম হবে দেশীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (এটিসিও) চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের জন্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে বিসিএসসিএলের সম্পাদিত চুক্তিনামাটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী পরে তা অ্যাটকোর চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিসিএসসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি চ্যানেল মালিকদের অতীতে অ্যাপস্টার-৭ ও এশিয়া স্যাট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে মেগা হার্টজপ্রতি ফ্রিকোয়েন্সির জন্য মাসে ৪ হাজার ডলার ব্যয় করতে হতো। সেখানে দেশীয় চ্যানেলগুলোর জন্য প্রতি মাসে স্যাটেলাইটের ভাড়া ২ হাজার ৮১৭ ডলার নির্ধারণ করেছে বিসিএসসিএল।
এর আগে গত ১৯ মে বিসিএসসিএল স্থানীয় ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চ্যানেলগুলো হচ্ছে সময় টিভি, যমুনা টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় টিভি, বাংলা টিভি ও মাই টিভি।
এ ছাড়া রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ২০টি নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। আয় বাড়াতে ফিলিপাইন, নেপালসহ কাভারেজ পায় এমন দেশগুলোকে স্যাটেলাইট ব্যবহারে আগ্রহী করার উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিসিএসসিএলের।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে এই চ্যানেলগুলো ফাইবার অপটিক কেব্লের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি ব্যবহারের ফলে বছরে আয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে উৎক্ষেপণের প্রায় ছয় মাস পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর দায়িত্ব বুঝে পায় বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড।
ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করেছে দেশি চ্যানেলগুলো।
২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘স্পেস এক্স’-এর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী যান ফ্যালকন-৯-এর সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫ বুস্টারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বত্বাধিকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।