১৯৭১-পূর্ববর্তী সময়টায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অব্যাহতভাবে যে দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে যে সাহসের পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন, সেটাও বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। আর রাজনৈতিক স্বাধীনতার এই লক্ষ্য অর্জনে দেশকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সমসাময়িকদের তুলনায় তিনি ছিলেন অনেক ওপরের স্তরের। এ ক্ষেত্রে তাঁর সাময়িক রাজনীতিক এবং অধস্তন বা দলের অন্য নেতাদের ভূমিকা কার্যকর হলেও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার সঙ্গে তা কোনোভাবই তুলনীয় নয়। তিনি বহু বছর পাকিস্তানের অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। সে জন্যই তিনি জাতির জনক বা স্থপতি।
একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের অধীনে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে একই সঙ্গে অনেক উপযুক্ত এবং সামর্থ্যবান সহকর্মী বা নেতার উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। তার জন্য কেবল একজন নেতার ক্যারিশমা বা আকর্ষণীয় চারিত্রিক গুণ এবং জনগণকে জাগিয়ে তোলার বা উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতাই যথেষ্ট নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে যে বহুমাত্রিক লক্ষ্য অর্জন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, তা তাঁর একক প্রচেষ্টায় অর্জন সম্ভব ছিল না। সে জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত ও সমর্থ রাজনৈতিক সহযোগীর, যাঁরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাসহ তাঁর সব দায়দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারতেন। তাঁর সহকর্মীদের উচিত ছিল নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করা। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও নির্মম সত্যটি হচ্ছে, তাঁর কাছাকাছি যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল তাঁদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব ছিল। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল মাত্র কয়েকটি বছর।
তিনি তাঁর সামনে উপস্থাপিত বিষয়টির আসল দিকটি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারতেন। তিনি যে জাতীয়করণের নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা তিনি এর সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন থেকেই নিয়েছিলেন। তিনি জাতীয়করণ করা শিল্পগুলোকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত করার যুক্তিকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের। কাজেই তিনি বিষয়টি শিল্পমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। টাকার অবমূল্যায়ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে মূল ভিত্তিটি কী হবে, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। খাদ্য ও সারের ক্ষেত্রে ভতুর্কি দিলে অর্থনৈতিক বিবেচনায় কী লাভ-ক্ষতি হবে, সে ব্যাপারে তিনি সচেতন ছিলেন। রাজনৈতিক বিবেচনায়ও তিনি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিদেশি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রেও তিনি দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্ব পালন করার সময় আমি তাঁর সব বিদেশ সফরের সঙ্গী ছিলাম। আমি দেখেছি যে বিভিন্ন বিদেশি নেতার সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা ও সমঝোতার সময় তিনি অনেক বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি তাঁর উষ্ণ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের গুণে তাঁদের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক তৈরি করতে পারতেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একনিষ্ঠ ও আপসহীন জাতীয়তাবাদী। তাঁর লক্ষ্য ছিল বৃহৎ শক্তিসহ সব ধরনের রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখা। যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছিল, আমার ধারণা, তারাও ১৯৭৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ব্যাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা খানিকটা হারিয়ে ফেলেছিল। মোটামুটিভাবে একটি জোটনিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চেষ্টা সোভিয়েত ইউনিয়নকে খুশি করেনি। তাদের প্রত্যাশা ছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তাঁদের অবদানের জন্য তাদের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে। আমার সঙ্গে সোভিয়েত কর্মকর্তারা আর্থিক সাহাঘ্য বিষয়ে আলোচনার সময় আমাকে তাদের অবদানের কথা প্রায়ই মনে করিয়ে দিতেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও নয়া চীন নীতির কারণে নিক্সন প্রশাসনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছিল।
১৯৭২-৭৫ সময়টায় পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের ব্যাপারে সমঝোতার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর শক্ত অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি ছিল না। স্নায়ুযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের গাঁটছড়ার কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও উদ্বেগের মধ্যে ছিল। জোরালো জাতীয়তাবাদী অবস্থানের কারণে ’৭৫ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধু আসলে কোনো বৃহৎ শক্তির কাছেই আর বিশেষ ঘনিষ্ঠ বা আপন দলের ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হননি। কোনো শক্তিমান দেশের আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক স্বার্থরক্ষা করার জন্য তিনি তাদের কারও সঙ্গে সম্পর্ক করতে উৎসাহী ছিলেন না। তাঁর দৃষ্টিতে যেকোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল বিবেচনার বিষয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ। এবং একই সঙ্গে তিনি এটাও বিবেচনায় রাখতেন যে এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কারণে যাতে অন্য তৃতীয় দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তিনি দ্বিধাহীনভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রশংসা করতেন এবং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে মূল্য দিতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতার বিষয়টির উল্লেখ করে বিরোধী পক্ষ সব সময়ই এই প্রচারণা চালাত যে বঙ্গবন্ধু ভারতের দাবি পূরণ করতে ও ভারতকে ছাড় দিতে আগ্রহী। কিন্তু এই ধারণা সত্য ছিল না। ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা ব্যারাজ, সীমান্ত বাণিজ্য, যৌথ শিল্প স্থাপন ও পাটের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি খুবই দক্ষতার সঙ্গে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে পারতেন। নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোতে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের তৎকালীন অবস্থান থেকে বুঝতে পারা যায় বঙ্গবন্ধুর নীতি কী ছিল।
দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র সীমানা নিষ্পত্তির ওপর নির্ভর করত সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান। কয়েক বছর আলাপ-আলোচনার পর সমুদ্র সীমানা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এই ব্যাপারটি নিরপেক্ষ সালিসের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। স্থল সীমান্ত ও ছিটমহলের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু নিজে উদ্যোগ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বললেন যে পাকিস্তানের সময়কার এই অমীমাংসিত সমস্যার ব্যাপারে সমাধান দরকার। ভারতের মতো বিশাল দেশের পক্ষে সামান্য জমি বা ছিটমহল নিয়ে দর-কষাকষি শোভা পায় না। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই সমস্যার সমাধান দরকার, যেহেতু বাংলাদেশের আয়তনের বিচারে এটা সামান্য বা উপেক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর এই কথায় ভারতের অবস্থান নমনীয় হয় এবং আলোচনার পরিবেশের উন্নতি ঘটে। পরে মীমাংসা সহজতর হয়। ফারাক্কার পানি বণ্টনের ব্যাপারে ভারতের প্রচুর চেষ্টা সত্ত্বেও ফারাক্কা ব্যারাজ সম্পূর্ণ চালু করতে দিতে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। সাময়িকভাবে কিছু পানি ছাড়ার ব্যাপারে দুই পক্ষ রাজি হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নদীর পানিপ্রবাহ কীভাবে বর্ধিত করা যায়, যাতে দুই দেশের পানির প্রয়োজন মেটে, সেই বিষয়ে আলোচনা করবে বলে দুই পক্ষ সম্মত হয়।
এসব উদাহরণ থেকে দেখা যায় ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ কোনো রকম দুর্বলতার পরিচয় দেয়নি। ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাঁর সতর্ক বিবেচনাবোধ কাজ করেছিল। বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা এবং কোনো ব্যাপারে নতিস্বীকারের বিষয়টি এড়িয়ে চলতে তিনি সব সময়ই সচেষ্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে সে ধরনের সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিতেন, যেগুলোতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারে। তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা একক বা স্বতন্ত্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। সার্বিক রাজনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এটা গড়ে ওঠে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তাঁর ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার কারণে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন। কিন্তু কিছু রাজনীতিবিদ ও বিদেশনীতির সঙ্গে জড়িত আমলাতন্ত্রসহ ভারতীয় কতৃর্পক্ষ সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নানা দিক নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। ভারতের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্বার্থের বিবেচনায় বাংলাদেশের রাজনীতি কী রকম হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই সংকীর্ণ ও অনুদার। সেই বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু কখনো ভারতের প্রতি বেশি সহযোগিতাপ্রবণ বা ছাড় দেওয়ার লোক হিসেবে বিবেচিত হননি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমস্যা ছিল প্রচুর। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক আলোচনা ও তর্কবিতর্ক হয়েছে। ১৯৭৪ সাল নাগাদ সামরিক ও বেসামরিক এই উভয় শাসনপ্রক্রিয়ার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বা পরস্পরবিরোধী লক্ষণ ছিল। তাতেও সামগ্রিক অস্থিরতার ভাব দেখা যায়। এর উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হচ্ছে বিরাজমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষী ও নেতৃত্বলোভী সেনা কর্মকর্তাদের অসহিষ্ণুতা, সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত একটি আধা সামরিক বাহিনী (রক্ষী বাহিনী) গঠন এবং সে সম্পর্কে সেনাবাহিনীর অসন্তুষ্টি; সীমিত বেতন, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরির ব্যাপারে নিরাপত্তাহীনতা এবং তাদের আর্থিক অনটন। জনগণের ধারণা ছিল যে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব এবং সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার নিম্নগতি মিলে তাদের জন্য এক দুরূহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছিল। এ ব্যাপারে আগেই উল্লেখ করেছি যে এ সময় বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন, তাঁর শক্ত নেতৃত্বে বাকশাল বা একদলীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ঠিক এক শ বছর আগে জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েও তিনি মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাশাপাশি স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিরোধী পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ কাজ ছিল না। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেই চেষ্টাই করেছিলেন। জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি রইল অগাধ সম্মান ও গভীর শ্রদ্ধা।
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: কাছে থেকে দেখা, প্রথমা প্রকাশন, ২০২০
নুরুল ইসলাম: বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি েচয়ারম্যান