স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফেরার দিনটি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় প্রতিবছর স্মরণ করে জাতি। মহানায়কের ফেরার সেই ঐতিহাসিক দিবস আজ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে এবার উৎসব-উদ্দীপনার সঙ্গে দিবসটি উদ্যাপিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সবই হচ্ছে সীমিত পরিসরে।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিনের অপরাহ্ণে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন অগণিত জনতা মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ও গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্বাগত জানান প্রিয় নেতাকে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান)। সেখানে লাখো মানুষের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ শুরুর পরই ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কার্যকরী ভূমিকা রাখব, ইনশা আল্লাহ।’
জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে এ বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে সরকার ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। গত বছর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকেই শুরু হয় মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা। শুধু সরকার নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থাও (ইউনেসকো)। কিন্তু কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে মুজিব বর্ষের জন্য নেওয়া কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সরকার মুজিব বর্ষের সময় আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আজ রোববার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির সহায়তায় এই ম্যারাথনের আয়োজন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয়ে হাতিরঝিলে গিয়ে শেষ হবে ম্যারাথন। দেশি-বিদেশি ২০০ খেলোয়াড় এতে অংশ নেবেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল নয়টায় ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বেলা সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল নয়টায় ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বেলা সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা।
এ ছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটি অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।