জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধুকে এই ডিগ্রি দেওয়ার আগে পাকিস্তান আমলের তিন শাসক খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা ও আইয়ুব খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিতর্কিত ব্যক্তিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার আন্দোলন পরিষদ’–এর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ না দেখলে ২৩ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে আবারও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা৷
অবস্থান কর্মসূচিতে পরিষদের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাখাওয়াৎ আনসারী বলেন, ‘আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের দাবি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়ার আগে তিন কুখ্যাত পাকিস্তানি শাসক খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা ও মুহাম্মদ আইয়ুব খানকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া ডিগ্রি প্রত্যাহার করতে হবে।’ দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ না দেখা গেলে ২৩ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে আবারও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন এই শিক্ষক।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারপারসন নমিতা মণ্ডল, একই বিভাগের অধ্যাপক দুলাল কান্তি ভৌমিক, সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রমথ মিস্ত্রী এবং ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান অংশ নেন।
অধ্যাপক সাখাওয়াৎ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ও অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। যাঁদের ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু পাকিস্তান আমলের নয়জনের মধ্যে তিনজনকে ডিগ্রি দেওয়া নিয়ে আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করছি। তাঁরা হলেন পাকিস্তানের ভূতপূর্ব গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন, ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দর মির্জা ও ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান। ভাষা আন্দোলনের ১৯৪৮ ও ১৯৫২—দুই পর্বেই খাজা নাজিমুদ্দিনের ভূমিকা ছিল বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে। ইস্কান্দর মির্জা ছিলেন অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী। আইয়ুব খান ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ অনেকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলা করেন। এই কুখ্যাত ব্যক্তিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া ডিগ্রি বাতিল না করে বঙ্গবন্ধুকে ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ হবে না।