বগুড়ায় গতকাল মঙ্গলবার চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের একজনেরও জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট কিংবা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ ছিল না। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে এসেছিলেন বলে সন্দেহবশত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। লক্ষণ না থাকার পরও শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এ রকম হলে করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা করতে হিমশিম খেতে হবে।' আয়ারল্যান্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকেরই উপসর্গ না থাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
আক্রান্ত চারজনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। আগে থেকে সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন আছেন। তিনি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো পাঁচজনের।
গতকাল সন্ধ্যায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা এক ব্যক্তি (৪৫) মারা গেছেন। পৌর শহরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি একটি পেট্রল পাম্পের কর্মী ছিলেন। গতকাল বিকেলে তাঁকে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছিল। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মারা যান আইসোলশনে থাকা ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি শহরের ব্যস্ততম সাতমাথা এলাকায় চটপটি বিক্রি করতেন। কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৭ এপ্রিল তিনি আইসোলেশনে ভর্তি হয়েছিলেন।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিন বলেন, আইসোলেশনে মারা যাওয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন করোনা নেগেটিভ। অন্যজনের নমুনার ফলাফল এখনো আসেনি।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল করোনাভাইরাস শনাক্ত চারজনের মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার এক দম্পতি আছেন। ২৫ বছর বয়সী স্বামী নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে চিকিৎসকের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেন। ২০ বছর বয়সী তাঁর স্ত্রী একজন গৃহিণী। আক্রান্ত আরেকজনের বাড়ি সোনাতলা উপজেলায়। ৪৫ বছর বয়সী ওই নারী সম্প্রতি ঢাকা থেকে ফিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া আদমদীঘির সান্তাহার শহরের ২৮ বছর বয়সী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি ও বিস্তার রোধে বগুড়া জেলা গতকাল বিকেল থেকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক এক গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী বগুড়াকে লকডাউন করা হয়েছে।
লকডাউন ঘোষণার ফলে এ জেলায় কেউ প্রবেশ কিংবা জেলা থেকে বের হতে পারবেন না। জেলার ভেতরে আন্তঃজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সব ধরনের গণপরিবহন, জনসমাগম বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসা সেবা, কৃষিপণ্য সংগ্রহ, খাদ্য সরবরাহ ও সংগ্রহ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং সেবা, ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্ট যানবাহন, কর্মী এই লকডাউনের বাইরে থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।