সরকার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু বগুড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া চালকেরা ১০০ শতাংশ বাড়িয়েছেন। গ্যাসের দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ে চলছে চরম নৈরাজ্য।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বগুড়ার সাতমাথা থেকে তিনমাথা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক। কয়েক দিন আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সাতমাথা থেকে তিনমাথা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৫ টাকা। কিন্তু এখন নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩ টাকা। এক ঘনমিটার গ্যাসে অটোরিকশা চলে অন্তত ৬ কিলোমিটার। এ হিসাবে ভাড়া এক টাকারও কম হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরে নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫ হাজার ৬৫৮টি। জেলায় অনিবন্ধিত অটোরিকশা আছে আরও ১৫ হাজার।
বগুড়া শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ায় চালকেরা সাতমাথা থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত দেড় গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। আগে এ পথে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। একই চিত্র সাতমাথা থেকে চারমাথা সড়কের। এ সড়কে কয়েক দিন আগে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। সাতমাথা থেকে শাজাহানপুরের সাবরুল পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এ ছাড়া সাতমাথা থেকে কাহালুর মালঞ্চ, জামগ্রামসহ বিভিন্ন পথে ৫ টাকা করে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
স্টেশন সড়ক ছাড়াও শহরের দত্তবাড়ি, চেলোপাড়া, পার্ক রোড, শেরপুর সড়ক, মাটিডালি, চারমাথা এবং বনানী মোড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্টেশন সড়ক ছাড়া অন্য স্ট্যান্ডগুলোতে এখনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অন্তত ২০ জন চালক এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গত মঙ্গলবার স্টেশন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, শহরের সাতমাথায় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ঘিরে মানুষের জটলা বেধেছে। কাছে গিয়ে জানা গেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে চালকের সঙ্গে এক যাত্রীর কথা-কাটাকাটি হচ্ছে। তিনমাথা থেকে প্রেসক্লাবের সামনে এসে যাত্রী দিচ্ছেন ৫ টাকা। কিন্তু চালক ১০ টাকা দাবি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পথে হঠাৎ অটোরিকশার ভাড়া দ্বিগুণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন, এমন অন্তত ৩০ জন যাত্রী জানান, অনেক যাত্রীর কাছ থেকে একরকম জোর করেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কেউ বেশি ভাড়া না দিলে তাঁর সঙ্গে চালকেরা খারাপ আচরণ করছেন। অনেকে সম্মানের ভয়ে বেশি টাকা দিয়ে দিচ্ছেন।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আকরাম হোসেন বলেন, জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ইচ্ছে হলো গ্যাসের দাম বাড়াল।
স্টেশন সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান শাহ আলম। তাঁর দাবি, সরকার এই ভাড়া বাড়ার জন্য দায়ী। গ্যাসের দাম না বাড়লে ভাড়া বাড়ত না।
স্টেশন সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ শেখ। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ভাড়া বেশি নেওয়া হলে সেটা মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত নয়। গ্যাসের দাম বাড়ায় চালকেরা প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তা নাকচ করা হয়েছে।
ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জায়গায় একই অবস্থা। যার যা খুশি তা–ই করছে। এই বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে দেখব।’
শহরের চারমাথার নিশিন্দারা এলাকার মেহেরা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মিল্লাহ হোসেন বলেন, গ্যাসের নতুন নির্ধারণ করা দাম ১ জুলাই রাত ১২টার (গত রোববার দিবাগত রাত) পর থেকেই কার্যকর হয়েছে। এরপর থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৪৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সচেতন নাগরিক কমিটি বগুড়া জেলার সভাপতি মাসুদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সিএনজির ভাড়া এভাবে বাড়ানো অস্বাভাবিক। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য
একটি চক্র প্রস্তুত থাকে। জনগণকে কার্যত জিম্মি করে এভাবে টাকা আদায় করা অন্যায়। এ বিষয়ে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারি করা দরকার।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে বিআরটিএ বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টেশন সড়কে কোন নীতি বা নিয়মে ভাড়া বাড়ানো হলো, এটা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’