‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ ও ‘৩০৫৩ দিন’ বই দুটির বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশে গঠিত তদন্ত কমিটি মতামত দিয়েছেন
‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বইটির গ্রন্থস্বত্ব বাংলাদেশ জেলের (কারাগার) থাকাই বাঞ্ছনীয়। দুটি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব ও মেধাস্বত্ব অনধিকার ব্যবহারে চেষ্টার অভিযোগ তদন্তে উচ্চ আদালতের আদেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতামতে এ কথা উল্লেখ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য এই বই দুটি প্রকাশিত হয়।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
প্রতিবেদনের সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা অংশে বলা হয়, কমিটি মনে করে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটির গ্রন্থস্বত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বইটির গ্রন্থস্বত্ব বাংলাদেশ জেলের নামে হওয়া যৌক্তিক। অনুরূপ গ্রন্থস্বত্ব নির্ধারণের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন হতে পারে। সর্বোপরি কপিরাইট অফিসের ইস্যু করা কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সনদ সংশোধন বা পরিবর্তন করার আইনানুগ সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে মতামত অংশে পাঁচটি দফা রয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বই দুটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বই। বই দুটি অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কাজের ফল। তবে গবেষণা, সম্পাদনা, কনসেপ্ট, প্রচ্ছদ, ডিজাইন এবং সর্বোপরি প্রকাশনার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জেলের সঙ্গে ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়ার’ নাজমুল হোসেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বই দুটির প্রথম প্রকাশে প্রকাশক হিসেবে যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জেল ছিল। পরবর্তী প্রকাশনায় প্রকাশক পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই এ দুটি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ এবং ‘বাংলাদেশ জেল’–এর থাকাই বাঞ্ছনীয় বলে কমিটি মনে করে।
বই দুটির কপিরাইট সনদ সংশোধনের পর ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ এবং ‘বাংলাদেশ জেল’ জার্নির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে বলে অপর দফায় উল্লেখ রয়েছে।
কমিটির পর্যবেক্ষণ
প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টির গুরুত্ব, মেধাস্বত্ব এবং বাণিজ্যিক/প্রকাশনা/বিপণনস্বত্ব নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা উপলব্ধি করে এবং বই সরবরাহ বাবদ প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ স্থগিত রেখেছে। মন্ত্রণালয়ে এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সমস্যা চিহ্নিত ও তা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সৃষ্ট জটিলতা ও প্রশ্নগুলোর সুরাহা করা সমীচীন।
আরও বলা হয়, কমিটি মনে করে যে সরকার এবং বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মেধাস্বত্ব তথা ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইট, তার প্রয়োগ এবং কপিরাইট আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যথাযথ উপলব্ধির অভাব রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া কাম্য। তাহলে ভবিষ্যতে অনুরূপ ক্ষেত্রে কর্মনীতি স্থির ও এর বাস্তবায়ন সুষ্ঠুতর হবে।
ওই দুটি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব এবং মেধাস্বত্ব অনধিকার ব্যবহারে চেষ্টার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন। গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ অনুসারে প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক শুনানি করেন। নাজমুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম হারুনুর রশীদ খান।