ফেস্টুন-দেয়াললিখনও হতে পারে দৃষ্টিনন্দন-রুচিশীল

রাজধানীর দেয়ালের গ্রাফিতি। ছবি: আবদুস সালাম
রাজধানীর দেয়ালের গ্রাফিতি। ছবি: আবদুস সালাম

এখন যেকোনো ছুতায় ছবিতে ছেয়ে যায় রাজপথ ও অলিগলি। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে যায়। এগুলোর মধ্য কিছু কিছু দৃষ্টিনন্দন হলেও দৃষ্টিকটু বিষয়ও আছে।

রাজধানীর দেয়ালে শোভা পাওয়া ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও দেয়াললিখন রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। তবে সামাজিক কিছু বার্তাও এগুলোর মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

আজকাল উৎসব-পার্বণ ছাড়াও যেকোনো ছুতায় ফেইস ম্যানিয়াকদের ছবিতে ছেয়ে যায় রাজপথ ও শহরের অলিগলি। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড যেখানে যেভাবে যতটুকু সম্ভব সর্বক্ষণ শুধু আমার-আমি-আমিত্বের প্রতিধ্বনি। আমাদের অতিপ্রিয় মুখ পুস্তিকার দেয়ালও সেখান থেকে রক্ষা পায় না। ছোট, বড়, মেজ, সেজ মিলিয়ে বিভিন্ন আকারের ১২-১৩টা ছবি ঠেসে আঁটান হয় চার বাই চার ফুটের এক-একটা ফেস্টুনে। প্রাণ থাকলে ছবিগুলোর ক্রন্দনে বোধ করি শহরময় ছোটখাটো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো! মৌসুমি পাখি ও বসন্তের কোকিলেরা ভাইয়ের সঙ্গে, ক্ষমতাবানদের সঙ্গে, প্রতিষ্ঠার প্রতিভূদের সঙ্গে ছবি তুলে শহরময় ছড়িয়ে দিয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতায় ওজনে বেড়ে যাওয়ায় ব্রতী হয়। আতি-পাতি-হাইব্রিড নেতা-নেত্রীরা নিজেকে দলের শীর্ষ নেতার সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার কি প্রাণান্ত প্রচেষ্টা! কখনো কখনো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়েও ১০ গুণ বড় করে তাঁদের বদনখানা পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে স্থান করে নেন।

কিছুদিন আগেও রাজধানীর দেয়ালে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ গ্রাফিতি নজর কেড়েছিল। ছবি: আবদুস সালাম

বর্তমানে ডিজিটাল ব্যানারে শহর সয়লাব হলেও একদা দেয়াললিখনই ছিল সর্বেসর্বা। প্রান্তজনের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘চিকা’। চিন্তা-চেতনা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ‘চিকা’র শক্তিমত্তার কথা আজ আমরা ভুলতে বসেছি! এককালে ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন’- এ তিনটি শব্দই হয়তো কোমলপ্রাণ অনেক দেয়ালপাঠকের অশ্রু ঝরিয়েছে। বেদনার সিলমোহর হিসেবে আইজুদ্দিনের কষ্ট আমাদের মাঝেও সংক্রমিত হয়েছে। ‘বন্দে মাতরম’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’ এসব দেয়াললিখন দেখতে দেখতে অনেকে বড় হয়েছেন। কিছুদিন আগেও রাজধানী ঢাকার দেয়ালে আঁকা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’ বা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ গ্রাফিতি আমজনতার নজর কেড়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে নিয়ে এই গ্রাফিতি প্রায় দেয়ালেই দেখা মেলে। ছবি: আবদুস সালাম

ক্রান্তির এ লগনে ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশভঙ্গিরও দেখা মেলে। যদিও এগুলো একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের। তথাপি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় বিভিন্ন দিবস, উৎসব ও পার্বণে প্রকাশিত এই ডিজিটাল ব্যানার ও দেয়াললিখনগুলো বেশ শিল্পসম্মত ও নান্দনিক। ব্যক্তির রাজনৈতিক বিদ্বেষ না থাকলে চক্ষুশূল না হয়ে সেগুলো তাঁর নিকট চক্ষুশীতলকারী হয়েও দেখা দিতে পারে। এগুলো পথচারীদের যেমন আকৃষ্ট করতে পারে, তেমনি অগ্রজ ও অনুজ রাজনৈতিক কর্মীদের অনুপ্রেরণার জোগান দিতে পারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে সৃজনশীল এই কাজের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মাহাবুব আলম শাহীন। নগর থেকে নগরান্তরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে নব নব শাহীনের জন্ম হোক। সু-বোধ ফিরে আসুক। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠুক।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নচিত্র দলটি এভাবেই তুলে ধরে। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ জাকি

*হোসাইন মোহাম্মদ জাকি: গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ