মাদক

ফেনসিডিলের বদলে ‘এস্কাফ’ আসছে

এই মাদক সেবনে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে পড়ে, নষ্ট হয় পুরুষের প্রজননক্ষমতা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে নতুন মোড়কে ভারত থেকে মাদক আসছে। এত দিন যাঁরা ফেনসিডিলের কারবার করতেন, তাঁদের অনেকেই এখন নতুন এই মাদক কারবারে জড়িয়েছেন। বাংলাদেশে তুলনামূলক কম পরিচিত হওয়ায় কাশির সিরাপ পরিচয় দিয়ে ‘এস্কাফ’ নামের এই মাদক নিয়ে আসছেন তাঁরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেনসিডিল ও এস্কাফ মূলত একই জিনিস। দুটিই কোডিন ফসফেট মিশ্রিত মাদক। ভিন্ন নামের কারণে মাদকসেবীরাও এটার দিকে ঝুঁকছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এই মাদক সেবনে গলা–বুক শুকিয়ে আসে, ঝিমুনির মতো হয়ে থাকে। এটি সেবনে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে পড়ে। আরেকটি বড় ক্ষতির দিক হচ্ছে, দীর্ঘদিন সেবনে পুরুষের প্রজননক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

ভারতের ল্যাবোরেট ফার্মাসিউটিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাশির ওষুধ হিসেবে এই সিরাপ তৈরি করে। তবে নেশাদ্রব্য হিসেবে বহুল ব্যবহারের কারণে ভারতে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন বন্ধ হয়নি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও এই মাদক ছড়িয়েছে।

গত ২৫ জুন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) খিলগাঁওয়ের নাগদারপাড় সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে ১৮৪ বোতল এস্কাফ জব্দ করে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, এই চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, দেড় বছর ধরে তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে এস্কাফ নিয়ে আসছিলেন। এরপর কাশির সিরাপ পরিচয়ে নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এই সিরাপ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, সেই সুযোগই তাঁরা নিচ্ছিলেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ দেশে এস্কাফ একেবারে নতুন মাদক নয়। ২০১০ সাল থেকেই এটা আসছে। তবে বছর দেড়েক ধরে এই মাদকের চালান বেশি আসছে। এর প্রতি মাদক সেবনকারীদের আগ্রহ বাড়ায় দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মূলত কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়েই এস্কাফ বেশি আসছে।

গত ২০ জুন আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় ৩৬ বোতল এস্কাফসহ দুই মাদক কারবারি ধরা পড়েন। এ ছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুরেও বিভিন্ন সময় এস্কাফ ধরা পড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ৬৫ বোতল এস্কাফসহ এক মাদক কারবারি ধরা পড়েছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই জেলার সীমান্ত দিয়ে এখন ফেনসিডিল আসে না বললেই চলে। এখন এর বিকল্প হিসেবে এস্কাফ আসছে। সীমান্ত এলাকায় এর দাম ফেনসিডিলের চেয়ে কম। এ কারণেও হয়তো মাদক কারবারিরা এস্কাফ নিয়ে আসতে পারেন।