ফুল ভাসিয়ে প্রাণের উৎসব শুরু

পাহাড়ি তরুণীরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা করেন। গতকাল সকালে খাগড়াছড়ির মাইনী সেতু এলাকায়। পলাশ বড়ুয়া
পাহাড়ি তরুণীরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা করেন। গতকাল সকালে খাগড়াছড়ির মাইনী সেতু এলাকায়।  পলাশ বড়ুয়া

নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার পাহাড়ে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসুক ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসব। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনে বাড়িঘর পরিষ্কারের পর নদীতে স্নান করে পরিশুদ্ধ হয় পাহাড়িরা। এই দিনে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর রেওয়াজ আছে। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে পাজনসহ হরেক রকমের খাবার দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে আপ্যায়ন করা হবে অতিথিদের। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।

রাঙামাটি: রাঙামাটিতে গতকাল ভোরে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল বিজু উৎসব। বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন সকাল ছয়টায় শহরের রাজবন বিহার ঘাটে ফুল ভাসানো উৎসব উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফুল ভাসানো উৎসবের সমন্বয়ক ইন্দু লাল চাকমা, আদিবাসী ফোরামে পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি চাকমা প্রমুখ।

এরপরে পাহাড়ি তরুণ-তরুণী, শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ দল বেঁধে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কিশোর-কিশোরীরা ফুল সংগ্রহ করে। পাহাড়িদের বাংলা পুরোনো বর্ষবিদায় ও নতুন বর্ষবরণের উপলক্ষে এই উৎসব করে থাকে। আজ মারমা, ত্রিপুরা, বম, খিয়াং, চাকসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের উৎসব শুরু হবে।

বান্দরবান: বান্দরবানে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তবে জেলায় বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মঙ্গল শোভযাত্রার মধ্য দিয়ে আজ সাংগ্রাই বা বৈসাবির মূল উৎসব শুরু হবে।

চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা সকালে শঙ্খ নদে ফুল ভাসিয়ে বিজু-বিষু উৎসবের সূচনা করেন। এরপর গঙ্গা মায়ের কাছে আগামী বছরের জন্য সুখ-শান্তি কামনা করেন তাঁরা। আজ তাঁদের মূল উৎসব। এদিনে ঘরে ঘরে পাজন ও বিভিন্ন খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হবে। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ির আন্তাহাপাড়ায় মঙ্গলা শোভাযাত্রা করে উৎসব শুরু করেছে।

এদিকে সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় জেলা শহরের বালাঘাটায় তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর ঘিলাখেলার আয়োজন হয়। খেলার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসুক উপলক্ষে ত্রিপুরা সংস্কৃতি মেলা ও গরাইয়া নাচের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গতকাল শহরের খাগড়াপুর এলাকায় ত্রিপুরা সংস্কৃতি মেলা ও গরাইয়া নাচের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহা. আহমার উজ্জামান, জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা, খগেশ্বর ত্রিপুরা প্রমুখ।