একটি স্টেশনঘর। সামনে তিনটি রেললাইন। আঠারো শতকের শেষ দিকে তোলা এই ছবিটি ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের। ইন্টারনেটসহ পুরান ঢাকার ছবি আছে এমন বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও ছবিটি দৃশ্যমান। ১৯০৪ সালে লর্ড ও লেডি কার্জনের ট্রেনে করে ঢাকায় আসা উপলক্ষে এই ফুলবাড়িয়া স্টেশনের আরেকটি ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী ফ্রিজ ক্যাপ। সেটিও আছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে। ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখা সব বইয়েই আছে এই স্টেশনের কথা। কিন্তু কোথায় সেই ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন? তথ্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ১৯৫০ সালের মাঝ পর্ব পর্যন্ত ঢাকার রেলস্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। ক্রমে এই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সে কারণেই এই রেলস্টেশন সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করা হয়। কমলাপুর রেলস্টেশন নির্মাণ ও রেললাইন স্থাপনের কাজ ১৯৫০-এর শেষ দিকে শুরু হলেও তা চলতে থাকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৮ সালের ১ মে থেকে কমলাপুর স্টেশনে রেল চলাচল শুরু হয়। তবে ঢাকার আদি বাসিন্দাদের ফুলবাড়িয়া স্টেশন নিয়ে আছে অসংখ্য স্মৃতি। পুরান ঢাকার নানা স্মৃতি নিয়ে মীজানুর রহমানের লেখা ঢাকা পুরাণ স্মৃতি গ্রন্থে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের বিশদ বর্ণনা আছে। তাতে বলা হয়েছে, স্টেশনের নাম ছিল ফুলবাড়িয়া কিন্তু প্ল্যাটফর্মের দুই মাথায় নামফলকে খোদাই করা ছিল ঢাকা। মফস্বলের স্টেশন যেমন হয় ফুলবাড়িয়া ছিল তেমনি সাদামাটা। তবে ফুলবাড়িয়ার প্রধান আকর্ষণ ওর লোহা পেটার মায়াবী শব্দ নয়; বরং নতুন আনকোরা বই আর পত্রপত্রিকার আড়ং হুইলার বুক স্টল। ষাটের মাঝামাঝিতে এই ফুলবাড়িয়া স্টেশন ছিল সান্ধ্য আড্ডার কেন্দ্র। এখানকার থার্ড ক্লাস ক্যানটিনের বেঞ্চিতে শহীদ কাদরী, মাহমুদুল হকসহ আরও কতজনই না আড্ডা দিয়েছেন। চল্লিশের দশকের ঢাকা স্মৃতি গ্রন্থে সরদার ফজলুল করিম লিখেছেন, ঢাকার রেলস্টেশন বলতেই ফুলবাড়িয়াকে বোঝানো হতো। কিন্তু ১৯৮৩ সাল থেকে ঢাকা থেকে যাতায়াতকারী বাসের প্রধান কেন্দ্র এই ফুলবাড়িয়া। অবশ্য বিআরটিসির বাস কাউন্টার, বিপণিবিতান আর উড়ালসড়কের কারণে যাঁরা ঢাকার আদি বাসিন্দা শুধুই তাঁরা ফুলবাড়িয়ার স্মৃতি খুঁজে পাবেন।
লেখা: শরিফুল হাসান, ছবি: মনিরুল আলম