রোদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ফুলের উজ্জ্বলতা। রাস্তা থেকেই চোখে পড়ছে। রাজশাহীতে এর আগে তাঁর চোখে পড়েনি এমন ফুল। ফুল নিয়ে কাজ করেন শাহীন সালেহউদ্দিন। তিনি বললেন, এটা তো আফ্রিকান টিউলিপ। শোনা যায়, কবিগুরু নাম দিয়েছিলেন রুদ্রপলাশ।
রাজশাহী নগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকায় অবস্থিত মিশনারিজ হাসপাতালের পাশে একটি গাছ। হাসপাতালের কর্মচারীরা বললেন, তামিলনাড়ু থেকে তাঁদের একজন সিস্টার একটি চারা এনে এখানে রোপণ করেছিলেন। ১২ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায় অনেক ফুল ফুটে আছে। গাছের বৃত্তান্ত জানতে কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্লান্ট ডিকশনারিতে এই গাছের ইংরেজি নাম আফ্রিকান টিউলিপ বলা আছে। রুদ্রপলাশ নামটি নেই। উপকূলীয় অঞ্চলে এই গাছ বেশ দেখা যায়। বালি দ্বীপে প্রথম এই গাছ দেখে তিনি বাংলাদেশে এই গাছের খোঁজ শুরু করেছিলেন। প্রকৃতিবিদ মোকারম হোসেন জানালেন, রুদ্রপলাশ নামটি পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত। সে দেশ থেকেই গাছটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাটে এ গাছ অনেক আছে। বাংলাদেশে রমনা পার্কে তিন-চারটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি, চারুকলা অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় এই গাছ আছে।
রুদ্রপলাশের বৈজ্ঞানিক নাম spathodea campanulata । এরা Bignoniaceae পরিবারের সদস্য। শাখান্তে গুচ্ছবদ্ধ ফুলের প্রগাঢ় রক্তিম বর্ণচ্ছটা এবং প্রস্ফুটনের প্রাচুর্য দেখে একে হঠাৎ পলাশের আত্মীয় বলে ভুল করাও অসম্ভব নয়।
আফ্রিকান টিউলিপ দীর্ঘাকৃতির বৃক্ষ। কাণ্ড সরল, উন্নত এবং শাখা-প্রশাখা এলোমেলো, বাকল ম্লান-ধূসর, মসৃণ এবং গ্রথন আঁশযুক্ত। যৌগিক পত্র বিরাট ও বিন্যাস বিপ্রতীপ। পাতারা শাখান্তে থাকায় গাছটি ছায়াঘন নয়। বৃক্ষ পত্রমোচী হলেও বছরে কোনো সময়ই সম্পূর্ণ উদোম হয় না। ছিন্ন, বিবর্ণ কিছু পাতা চৈত্র-বৈশাখের প্রচণ্ড রৌদ্র এবং শুষ্কতায়ও শাখায় বিক্ষিপ্ত থাকে। বসন্ত নতুন পাতা আর প্রস্ফুটনের ঋতু। কচি পাতার উজ্জ্বল-সবুজ আর পুষ্পিত মঞ্জরির উচ্ছ্বসিত রক্তিম বর্ণচ্ছটায় সুদর্শন এই পুষ্পতরু সমকালীন সব গাছকে হার মানায়। এ ফুলের গন্ধ উৎকট এবং বাদুড়েরা সম্ভবত এই জন্যই আকৃষ্ট হয়। এরাই পরাগায়নের সহযোগী। বসন্ত ছাড়া বছরের অন্য সময়ে দু-এক স্তবক ফুল ফোটা অসম্ভব কিছু নয়। ফল দেখতে বর্শাফলকের মতো। সাধারণত বর্ষার শেষেই ফল পাকার মৌসুম।
১৫ থেকে ২০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন একটি চিরসবুজ গাছ। কোথাও কোথাও এর বেশি উচ্চতার রুদ্রপলাশের দেখা মেলে। বসন্তের শুরুতে উজ্জ্বল সবুজ পাতার রুদ্রপলাশগাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় লাল রঙের ফুল ফোটে। কোথাও কোথাও হলুদ রঙের রুদ্রপলাশেরও দেখা পাওয়া যায়। ফুলের ভেতরের অংশ লালচে সোনালি। পাপড়ির চারপাশে হলুদ রঙের বর্ডার। কলসির মতো ফুলটিতে পানি জমে। এই পানি সুস্বাদু—মিষ্টি। ফুলের বোঁটা বাঘের নখের মতো বাঁকানো এবং গাঢ় সবুজ।