মাইক্রোবাস চাপায় স্কুলশিক্ষার্থী ফাইজা তাহসিনা নিহতের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সেতুর দুর্ঘটনাস্থলে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়; স্পষ্টত হত্যা।
উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের ফ্ল্যাটমালিকদের আয়োজিত এই মানববন্ধনে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনসহ মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। ফাইজা তাহসিনা (সুচি) ইত্তেফাক-এর সহকারী সম্পাদক ফাইজুল ইসলামের মেয়ে ও উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত মঙ্গলবার সকালে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত হয় সে।
মানববন্ধনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহন খাতে বিদ্যমান অনিয়ম দূর না করলে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। কিন্তু অনিয়ম দূর করার কোনো কাজই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত অক্টোবরে একটি আইন পাস করাতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এই আইনের কারণে পরিবহন খাতের লোকজন আমাকে অবাঞ্ছিত করেছে। সেই আইনটি এখনো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইনের কোনো বিধি এখনো তৈরি করা হয়নি। বিধি ছাড়া আইনের কোনো মূল্য নেই।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, কিছুদিন পরপর বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করে কোনো লাভ নেই। এতে জরিমানা আদায় করা যায় কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। কারণ প্রায় ১৮ লাখ চালক এখনো ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সে গাড়ি চালান। এঁদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজ উদ্যোগে সচেতনতা তৈরি করারও আহ্বান জানান তিনি।
ফাইজার বাবা ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারী চালককে দ্রুত আটক করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সামসুল আলম বলেন, ‘ফাইজা ও আমার মেয়ে একই স্কুলে পড়ে। সে আমার দিকে আসতেই রাস্তা পার হচ্ছিল। তখন একটি মাইক্রোবাস সজোরে এসে তাকে ধাক্কা মারে। এতে ফাইজা ছিটকে পড়ে। পরে মাইক্রোবাসের চালক ফাইজার মাথার ওপর দিয়ে গাড়িটি উঠিয়ে দেয়।’ তিনি এই ঘটনাকে একটি হত্যাকাণ্ড বলেও মন্তব্য করেন।
উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই দুর্ঘটনার দায়ভার রাজউক কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। কারণ রাজউকের এই প্রকল্প এলাকায় দুইটি স্কুল থাকার কথা। কিন্তু ফ্ল্যাট বরাদ্দপ্রাপ্তরা ফ্ল্যাটে ওঠা শুরু করলেও রাজউক এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাঠ, পার্ক, কাঁচাবাজার—কিছুরই ব্যবস্থা করেনি। তাই বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেককে দূরে উত্তরাতে গিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে।
ইমরান হোসেন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, প্রকল্প এলাকা ও এর আশপাশের রাস্তায় কোনো গতিরোধক নেই। এই সুযোগে সবাই প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি-মোটরসাইকেল চালায়। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে আরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
মানববন্ধনের অন্য বক্তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ প্রশাসন এখনো গাড়ির চালককে আটক করতে পারেনি। এটা প্রশাসনের গাফিলতির প্রমাণ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালককে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
মানববন্ধনে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালাহউদ্দিন কাইজারের সভাপতিত্বে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুদ্দিন, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবদুল মুনিম খান, রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।Ü
এ সময় নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলসহ সেখানকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বিশেষ সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়।