ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী

বন্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নগর ছাড়ছেন। ভিড় পড়ে গেছে ট্রেনের জন্য। গতকাল দুপুরে রাজশাহী রেলস্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো
বন্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নগর ছাড়ছেন। ভিড় পড়ে গেছে ট্রেনের জন্য। গতকাল দুপুরে রাজশাহী রেলস্টেশনে।  ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশের মতো রাজশাহীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে ১৭ মার্চ। গতকাল বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নগরের অন্য কলেজের ছাত্রাবাসও এদিন বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আবাসিক হল ও মেস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে জনশূন্য হয়ে পড়ছে রাজশাহী নগর।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর মঙ্গলবারই অনেকে চলে গেছেন। যাঁরা ছিলেন, গতকাল দুপুরের মধ্যে তাঁরাও আবাসিক হল ও মেস ত্যাগ করেছেন। গতকাল রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে ঘরে ফেরা যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল।

করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশের মতো রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হার কমে গিয়েছিল। করোনার আতঙ্কে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার পর মঙ্গল ও বুধবার শিক্ষার্থীরা বাড়ির পথ ধরেন। ফলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী শহর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর সবচেয়ে জনবহুল। সব সময় গানবাজনা, হইহুল্লোড় লেগে থাকে। খাবারের দোকানঘেরা এই জায়গায় গতকাল সকালে কাউকেই দেখা যায়নি। দোকানগুলোর বেঞ্চ-টেবিল গুছিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, তার পাশে থাকা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও নেই কোনো কোলাহল।

বেলা পৌনে দুইটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় দেখা গেল ঘরে ফিরতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জটলা। তাঁদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক। হাতে ব্যাগ ও বইপত্র। অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় তাঁরা স্বস্তি পাচ্ছেন। গ্রামে ফিরে তিনি বাড়ির মধ্যে থাকবেন।

বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে বেশ ভিড়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু পলাশ অপেক্ষা করছিলেন ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য। তিনি বলেন, তাঁরা জানেন, সারা পৃথিবীতে করোনা এখন মহামারি। বাংলাদেশেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এই সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি।

বন্ধ ঘোষণার পর আবাসিক হল ছাড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। গতকাল বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ যাচ্ছিলেন টাঙ্গাইলে। তিনি মাস্ক পরে বসে ছিলেন প্ল্যাটফর্মে। বললেন, এবার আচমকা ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন। এ ধরনের ছুটি তাঁর কাছে কাম্য নয়। বাড়িতে গিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরেই অবস্থান করবেন।

বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে সতর্ক থাকবেন। অকারণে ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা না করবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় এবং করোনা–আতঙ্কে রাজশাহী শহর প্রায় জনশূন্য। অটোরিকশানির্ভর এ শহরে তাই অটোরিকশাও কমে গেছে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছেন, অন্যদিকে অপ্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন অটোরিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। 

রাজশাহী নগরের অটোরিকশাচালক জনি মিয়া বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে শহরটা খালি হয়ে যাচ্ছে। কী যে খাব, বুঝতে পারছি না।’

মাস্ক পরা ইব্রাহিম নামের আরেক অটোচালক বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তিনি আজ বৃহস্পতিবার থেকে অটো চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বললেন, ‘আগে জীবন, পরে অন্য কাজ।’

শহরের বিভিন্ন মোড়ে থাকা চায়ের স্টলেও ভিড় কম দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে জটলা ছিল আগের তুলনায় অনেক কম। লক্ষ্মীপুর এলাকার এক মসজিদের ইমামের সঙ্গে কথা হয় এক অটোরিকশায়। তিনি জানালেন, মসজিদে দুই দিন ধরে মুসল্লি কিছুটা কমেছে। তিনিও চান, লোকজন নামাজ বাড়িতে পড়ুক।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা নগরের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, শহরের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী চলে গেছেন। সাধারণ মানুষের আনাগোনাও কিছুটা কমে গেছে। এ জন্য নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। তাঁরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। যত দিন পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা থাকবে, তত দিন বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে।