প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সিলেট পর্ব শেষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইএসসিপিসি) সিলেট আঞ্চলিক পর্বে নিবন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। ছবি: আনিস মাহমুদ
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইএসসিপিসি) সিলেট আঞ্চলিক পর্বে নিবন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। ছবি: আনিস মাহমুদ

সকাল সাড়ে আটটা। সিলেট শহর থেকে বাসে করে শিশু-কিশোরেরা জড়ো হচ্ছেন লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে। লাইন ধরে নিবন্ধন শেষ করে দাঁড়ালেন উন্মুক্ত প্রান্তরে। সবাই স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। উদ্বোধন করা হলো স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (আইএসসিপিসি)-২০১৯ এর সিলেট আঞ্চলিক পর্ব।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে বেলুন উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান আসাদুজ্জামান খান, সিএসই বিভাগের শিক্ষক মিনহাজুল হক রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা দুটি আলাদা ক্যাটাগরিতে প্রোগ্রামিং ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিভিন্ন কম্পিউটার ল্যাবে ঢুকে পড়েন। সকাল সোয়া ১০টা থেকে তিন ঘন্টার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা চলে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত। আর কুইজ হয় আধা ঘন্টার। এতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

সকালে বেলুন উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান আসাদুজ্জামান খান, সিএসই বিভাগের শিক্ষক মিনহাজুল হক রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ছবি: ছবি: আনিস মাহমুদ

দুপুর ১২টার দিকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি প্রতিযোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন লিডিং ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের প্রধান আসাদুজ্জামান খান। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহিত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিশ্বে খুব দ্রুত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর এ পরিবর্তনের সব বিষয়েই রয়েছে প্রযুক্তিগত ইনোভেশন। এ পরিবর্তনের ভবিষ্যত নির্ভর করছে তরুণ প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির ওপর। তাই প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ হতে হবে।

উপাচার্য মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসকে বাস্তবে পরিণত করতে পারবে প্রোগ্রামাররা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আজকের খুদে প্রোগ্রামারদেরই। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুনির হাসান।

সিলিকন আইটি সিলেটের সফটওয়্যার প্রকৌশলী মিসবাহ্ উদ্দিন ও বিডিওএসএন-এর হুমায়ুন কবীর একের এক পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করলে উল্লাসে মেতে উঠেন বিজয়ীরা। সিলেট আঞ্চলিক পর্বে কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এমসি-নোবস। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যরা হলেন দাইয়ান নূরী দাহী, ফাহিম আহমেদ ও ইফতিয়ার মাহবুব ফুয়াদ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘এক কথায় অসাধারণ। বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রোগ্রামিংয়ে আমাদের সবার হাতেখড়ি। এখন এমসি কলেজে ভর্তির পরও এ চর্চা অব্যাহত রেখেছি। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্বজয় করতে চাই।’

শিক্ষার্থীদের উচ্ছাস। ছবি: আনিস মাহমুদ

কলেজ পর্যায়ে ১১টি দলকে পুরস্কৃত করা হয়। আর কুইজে পাঁচজকে পুরস্কার দেওয়া হয়। কুইজে বিজয়ী সবাই সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখার এসজিপিএইচএস-ডেসিফ্রেডর দল। এই দলের সদস্যরা হচ্ছেন-দেবদ্বীপ দাস দীপ্ত, নিলয় চক্রবর্তী ও অরিত্র বিশ্বাস। তাঁরা বলেন, ‘বিজয়ী হয়ে খুবই ভালো লাগছে। জাতীয় পর্যায়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।’

প্রথম রানার আপ হয় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের (জেসিপিএসসি) প্রসেনজিৎ দত্ত পল্লব, দেবজ্যোতি দাস সৌম্য, হোসাইন আহমেদ সম্রাটের দল জেসিপিএসসি-ক্রোনোফোবিক্স। দ্বিতীয় রানারআপ মো. গাজীউর রহমান নূর, মুসা আল কাফি ও সাইব হক ইমনের ইনোক্সেরেবল আনলিমিটেড বাংলাদেশ দল। চতুর্থ শাহজালাল উপশহর হাইস্কুলের কাজী আবু জাফর জাবেরের এসইউএইচএস ইলো দল। পঞ্চম স্থান দখল করে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রত্যয় দাস, আদিল আহনাফ ও বাধন দাসের দল কোয়েরিন। ষষ্ঠ সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেথাব মাহের, আশীষ রায় শাওন ও তারিফুর রহমান পিয়ালের দল পাইলটিয়ান-ফ্রেশকোডার্স। সপ্তম জেসিপিএসসির কামরুজ্জামান চৌধুরী, তাসনিম আহমেদ ইবতি ও তাসনিমুল হাসান রাহাতের দল প্রোগ্রামার্জ জেসিপিএসসি। সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের হুমায়রা জাহান আজরা, মৌটুসি দাস নিমি ও ফাহিমা খানম রশ্মীর দল জিএজিএইচএসসি-কোড-ব্রেকার্স দল অষ্টম স্থান দখল করেন। আর নবম হন সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফজলে রাব্বি ভূঁইয়া, কিশোর রায় ও তাহমিদ আল মামুনের দল বিজিপিএসসি-ডেঞ্জার-গাইস।

স্কুল পর্যায়ের কুইজে বিজয়ীর হচ্ছেন-সাদমান জামিল আদেল, ইসতিয়াক হাবিব তায়েফ, ফাইয়াজ রশীদ, জয় তালুকদার আদর ও শুভ চক্রবর্তী । বিজয়ীরা সবাই সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজ পর্যায়ের কুইজে বিজয়ী পাঁচ শিক্ষার্থী হচ্ছেন আরমান হোসেন, মো. বুরহান, আব্দুর রহমান শাকিল, প্রত্যুষ পল্লব ও মারজান আহমদ রিফাত। তাঁরা সবাই সিলেট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

আর কলেজের কুইজে বিজয়ী পাঁচজনের সবাই সিলেট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

প্রোগ্রামিংয়ে বিজয়ী স্কুল ও কলেজের ২০টি দল আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় আইএসসিপিসির জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় এসে সেলফি না তুললে কি হয়। ছবি: আনিস মাহমুদ

আজকের অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য ও লিডিং ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতার সিলেট আঞ্চলিক পর্বের পার্টনার দুরন্ত টিভি ও লিডিং ইউনিভার্সিটি।

বিজয়ী শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস নিয়ে ফিরে আসেন সিলেট শহরের উদ্দেশে। আর যাঁরা বিজয়ী হতে পারেননি তাঁরা আগামী বছর ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান।