প্রাকৃতিকভাবেই আমরা বহু বৈচিত্র্য ও বহু বিকল্পের অধিকারী। আমাদের হৃৎপিণ্ড দিয়ে যে রক্ত সঞ্চালন হয়, সেখানে একটা প্রাকৃতিক বাইপাস আছে। মাঝেমধ্যে যখন সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে বাইপাস করে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক রেখে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়। অনেক সময় দৌড়ে ক্লান্ত হলে যখন নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তখন মুখ নাকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এই পৃথিবীতে নানা ক্ষেত্রে বহু বিকল্প রয়েছে, বিকল্প পথে বা বিকল্প হয়ে টিকে থাকার ইতিহাসও অনেক।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা কিছুর নানা বিকল্প নিয়ে মানুষ এগিয়ে চলছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া পর্যন্ত সবই এখন অনলাইনে চালু আছে। একইভাবে শিক্ষাও। অনেক আগে থেকেই শিক্ষার বহু বিকল্প পথ উন্মুক্ত রয়েছে। একসময় ছিল গুরুমুখী বিদ্যা, এরপর এল প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা। এভাবে প্রতিষ্ঠান আর গুরুর মাঝামাঝি এল ভিন্ন এক পদ্ধতি। এই যে আমরা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বড় বড় পরীক্ষা দিই, টোফেল, আইইএলটিএস, জিআরই বা জিম্যাট—এসব পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নেয়। এ ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতিষ্ঠান বা গুরুর দ্বারস্থ না হলেও চলে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে। মোটকথা, একজন শিক্ষার্থী তার দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলেই তাকে আমরা বাহবা দিই, সে কোন পথে সেসব জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করেছে, সেটি আর বিবেচ্য হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে শিক্ষা নিয়ে বহুমুখী কথাবার্তা হচ্ছে। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে, অনলাইন ছাড়া এই মুহূর্তে ভালো কোনো বিকল্প নেই শিক্ষার জন্য। ফেস-টু-ফেস বা প্রচলিত পদ্ধতিতে পাঠদান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখন কার্যকর আছে শুধু দূরশিক্ষণ বা ইন্টারনেট দুনিয়াকে ব্যবহার করে শেখার পথ। আমরা হয়তো অনেক সময় না বুঝেই, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটকে আমলে না নিয়েই, সময়ের সবচেয়ে ভালো বিকল্প পথকেও কলুষিত করে, খারাপভাবে উপস্থাপন করে, নিজেদের মানহীন-জ্ঞানহীন বা বোধ-বুদ্ধিহীন হিসেব হাজির করার কাজটি করছি। কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি, যে লোকটি পেসমেকারের সহযোগিতায় (একধরনের ডিভাইস যেটি অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে) বেঁচে থাকে, সে কি সব জায়গায় এভাবে পরিচয় দেয় যে, আমি অমুক, পেসমেকারের সাহায্যে বেঁচে আছি? বরং দুঃসময়কে জয় করে বেঁচে আছে, সেটিই তার জন্য পরম আনন্দের বিষয়। ওই বেঁচে থাকাকেই আমরা উদযাপন করি।
প্রচলিত অনলাইন শিক্ষায় যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থাকে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাজ হতে পারে পদ্ধতির পরিশুদ্ধি নিয়ে কাজ করা। আমরা আন্তরিকভাবে চাইলেই, এই বিকল্প পথটি সুন্দর করে সাজাতে পারি। কলুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি। শুরুতে বলেছি, একজন শিক্ষার্থী তাঁর যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করবে। যোগ্যতা-দক্ষতা প্রমাণের অঙ্গীকার যদি একজন শিক্ষার্থীর মাঝে থাকে, তবে সে সুযোগের দিকে চেয়ে থাকবে না। বরং তার শিক্ষাই তার সামনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।