আমি সত্যি বলছি, আমি আবার ব্যস্ততম ওই সময়টায় ফিরতে চাই। যেখানে আবার আমার বন্ধুরা থাকবে, আমার ক্যাম্পাস থাকবে। যেখানে রোজ চায়ের কাপের সব আড্ডা থাকবে, রোজ ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরা থাকবে, রোজ হলের ডাইনিংয়ে একটুকরো মাংস থাকবে।
আমি অবসর চেয়েছিলাম সত্যিই, কিন্তু এমন অবসর তো চাইনি। যেখানে রোজ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর আসে। রোজ নিজেকে শুধু বাঁচিয়ে রাখতেই যুদ্ধ করতে হয়। যেখানে একটা আইসিইউর অভাবে অসহায় ছেলের চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় মাকে চলে যেতে হয়।
এখনতো তো আর আগের মতো ক্লাস শেষ হওয়ার জন্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা হয় না। স্যার বের হওয়ার আগেই সিএসসির চিপায় এককাপ চায়ের জন্য দৌড়ানো হয় না। এখনতো সপ্তাহের শেষ দিনটায় টিএসসিতে যাওয়া হয় না। আর মাসের শেষে টিউশনের বেতন পেয়ে সবার সাথে কাচ্চি খাওয়া হয় না। পিচ্চিদের আব্বু আম্মুর হাত ধরে স্কুলে যাওয়া হয় না । ধূসর ওই নগরীটায় ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা হয় না। সারাদিন অফিস করে সব বাবাদের মেয়ের জন্য চকলেট নিয়ে বাসায় ফেরা হয় না।
সত্যি বলতেছি, আর দিন গুনতে ইচ্ছে হয় না। আর রোজ মৃত্যুর সংবাদ দেখা তো ছেড়ে দিয়েছি সেই কবেই। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল টা যদি থেমে যেত! আবার যদি ধুলোবালি জমা ওই নগরীতে হাজার মানুষের নিশ্চিন্ত পদচারণা ফিরতো। আবার যদি টিভি রুমে একসাথে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা যেতো। আবার যদি টিএসসিতে চায়ের কাপে ভালোবাসা ফিরতো।
এখনতো ক্যাম্পাসে রোজ লালবাসগুলো আর আসে না। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে সকাল ৮ টার ক্লাস ধরতে সে কি দুশ্চিন্তা ! কিঞ্চিৎ, চৈতালি কিংবা কণিকায় এখন আর এই মানুষগুলো নামে না।
আচ্ছা, নিজেদের নিয়ে কতই না ভাবনা আমাদের। কদম ফুল বিক্রি করে আসা সেই পিচ্চিগুলোও তো সেই পুরোনো সময়টাকে হয়তো ঠিকই মিস করছে, চায়ের দোকানের মামাটাও হয়তো মিস করছে রোজ দোকানের সেই চিরচেনা আড্ডায় মেতে উঠা আমাদের। "এই মামা, কার্জন পর্যন্ত কত নিবা?" কথাটা হয়তো রিকশাওয়ালা মামাটা ও ভীষণ মিস করছেন।
নগরীর সেই ইট , বালি, পাথরও হয়তো ফিরে পেতে ভীষণ ফিরে পেতে চাইছে আমাদের।
এখনো তো ভাঙা হাটে হাজারো যোদ্ধার স্বপ্ন পূরণ বাকি ! একদিন আমরা আবার ফিরবো স্বপ্ন ফেরি করা আগের সেই চিরচেনা সময়ে যেখানে শুধু থাকবে, 'আমি আর আমার সুস্থ এই পৃথিবীটা'!
*শিক্ষার্থী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়