প্রতীক বরাদ্দের পর গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা বিভিন্ন সময় মামলা-হামলা, ধরপাকড় ও অন্যান্য হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে তাঁরা এক বা একাধিকবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, চিঠি, ই-মেইল, এমনকি সরাসরি উপস্থিত হয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও সাড়া পাওয়া যায়নি রিটার্নিং কর্মকর্তার।
গাজীপুর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সালাউদ্দিন সরকার। নৌকা প্রতীকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সাংসদ জাহিদ আহসান। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারণায় বাধা প্রদান, মাইক ভাঙচুর, পোস্টার ছেঁড়া, পুলিশি হয়রানি, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন সময় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন সরকার। এর মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর পুলিশি হয়রানি, গ্রেপ্তার-মামলার ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া একই দিন প্রচার মাইক ভাঙচুর, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আরও তিনটি অভিযোগ করেন তিনি। সালাউদ্দিনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. শারাফাত হোসেন বলেন, প্রতিদিনই চার-পাঁচটি করে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০-২৫টি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার নেই। বরং অভিযোগ দিলে নির্যাতনের পরিমাণ আরও বাড়ে। তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগ তিনি (রিটার্নিং কর্মকর্তা) দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি।
১৭ ডিসেম্বর বিনা পরোয়ানায় আটক করে ‘গায়েবি মামলায়’ ফাঁসানোসহ নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানির প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ দেন গাজীপুর-৩ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকী। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী পথসভা শেষে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাঁর দুই নেতা-কর্মীকে আটক ও বিভিন্ন সময় নেতা-কর্মীদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করেন তিনি। জানতে চাইলে ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগের পর কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং নির্যাতনের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া একাধিকবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু দেখি, দেখছি বলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেন না।
গাজীপুর-৪ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর দুটি অভিযোগ দেন তিনি। এর মধ্যে একটি অভিযোগে নির্বাচনী প্রচার মাইকের গাড়ি আটক করে ভাঙচুর এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতাকে আওয়ামী লীগের কর্মী দিয়ে মারধর করার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া ও নেতা-কর্মীদের মারধরের অভিযোগ এনে ই-মেইলে ৭-৮টি অভিযোগ করার কথা বলেন তিনি। এগুলোর প্রতিকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁরা শুধু (রিটার্নিং কর্মকর্তা) অভিযোগগুলো একসেপ্ট (গ্রহণ) করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার করেন না। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।’
২১ ডিসেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দারাবাদ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হন গাজীপুর-৫ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কারাবন্দী ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হক। সেখানে গাড়ি ভাঙচুরসহ তাঁর নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও এখনো ব্যবস্থা নেননি। শম্পা হক বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি। ২৪ ডিসেম্বর পুলিশের সামনেই আমার ওপর আবার হামলা হয়েছে।’
অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘যখন কোনো পক্ষ অভিযোগ করে তখন সেটা যাচাই করা ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তা বা আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন না। যতগুলো অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার কিছু সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। আর কিছু পাঠিয়েছি ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে। এগুলোর প্রতিবেদন পেলে যদি কাউকে মনে হয় কেউ নির্বাচন প্রভাবিত করছে, তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’