একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পঞ্চগড়-১ আসনের পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এখন সরব হয় উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, প্রচারপত্র বিতরণ, গণসংযোগসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এ ছাড়া বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পঞ্চগড় জেলা শহরসহ এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গান পরিবেশন ও মাইকিং করছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।
পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, পঞ্চগড়-১ আসনে বিভিন্ন দলের মোট সাতজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আসনের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধানের কাছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি মহোজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচনে মশাল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন জাসদের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের সাবেক সাংসদ মজাহারুল হক প্রধানকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী নওশাদ জমির।
বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালানোর সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজাহারুল হক প্রধান তাঁর সময়ের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার পাশাপাশি দিচ্ছেন নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নওশাদ জমির বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার পাশাপাশি এই এলাকার উন্নয়নে ভোট দিতে অনুরোধ করছেন ভোটারদের।
নৌকা ও ধানের শীষ ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আবু সালেক লাঙ্গল প্রতীক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) মনোনীত প্রার্থী আল রাশেদ প্রধান হুঁক্কা প্রতীক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ হাতপাখা প্রতীক, জাকের পার্টির প্রার্থী সুমন রানা গোলাপ ফুল প্রতীক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান আম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘নবম জাতীয় সংসদে আমি সাংসদ থাকা অবস্থায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকা সরাসরি রেললাইন সম্প্রসারণ করে ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়েছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবি পূরণ করেছেন। এবার নির্বাচিত হলে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হবে। পঞ্চগড় শহরের যানজট কমাতে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আরও উন্নয়ন করে শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পঞ্চগড়ের মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা আছে।’
এই আসনে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নওশাদ জমির ভোটারদের উদ্দেশে নির্বাচিত হলে তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলছেন। পাশাপাশি তিনি এই নির্বাচনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার নির্বাচন বলে উল্লেখ করছেন। তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন, ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন, বাক্স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আপনাদের একটি ভোট চাই।’ তিনি দাবি করেন, ‘এই এলাকার যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, এর পুরোটাই বিএনপির আমলে। এবার আমি নির্বাচিত হলে বেকারদের জন্য দেশে কিংবা বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।’
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের ছেলে দলের নতুন প্রার্থী আল রাশেদ প্রধান বলেন, ‘আমার নির্বাচনে আসার মূল উদ্দেশ্য পঞ্চগড়ের মানুষদের নিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করা। এ ছাড়া স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের এই পঞ্চগড়ের মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আমি নির্বাচিত হলে এই দুই খাতকে সবার আগে প্রাধান্য দেব।’